দক্ষিণ এশিয়া

পাঞ্জশিরে সংঘর্ষে ৮ তালেবান সদস্য নিহত

কাবুল, ৩১ আগস্ট – তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আফগানিস্তানের পাঞ্জশির প্রদেশের মাসুদ গ্রুপের হামলায় তালেবানের ৮ সদস্য নিহত হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম বরাতে জানায়, সোমবার (৩০ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাতে এক সংঘর্ষে ৮ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে বার্তা সংস্থা র‍য়টার্স ৭ জন নিহতের খবর দিয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল সহ সব প্রদেশ তালেবানদের দখলে চলে গেলেও পাঞ্জশির একমাত্র প্রদেশ যা এখনো পর্যন্ত তালেবানরা কব্জা করতে পারেনি। এছাড়া পাঞ্জশিরের পার্শবর্তী বাঘলান প্রদেশেও তালেবানদের সঙ্গে স্থানীয় আফঘান যোদ্ধাদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

পাঞ্জশিরে ন্যাশনাল রেসিসটেন্স ফোর্স এর মুখপাত্র ফাহিম দাসতি জানান, পাঞ্জশির উপত্যকার পশ্চিম দিকের প্রবেশ পথে তালেবানরা হামলা চালায়। আমাদের যোদ্ধারা সেই হামলা প্রতিহত করে। এতে ৮ তালেবান সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন তালেবান সদস্য আহত হয়েছে। আমাদের মাত্র দুই জন সেনা সামান্য আহত হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় পাঞ্জশিরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য যে কোন জায়গার থেকে উন্নত। এদিকে ৮ সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়ে তালেবানদের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আহমেদ মাসুদ, সাবেক সোভিয়েত বিরোধী আফগানিস্তানের প্রখ্যাত মুজাহিদিন কমান্ডার আহমাদ শাহ মাসুদের সন্তান। আহমাদ মাসুদ পাঞ্জশির উপত্যকায় নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার নেতৃত্বে কয়েক হাজার যোদ্ধা রয়েছে। এর আগে আহমাদ মাসুদ জানিয়েছেন, তিনি তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি আছেন তবে পাঞ্জশির প্রদেশ এবং উপত্যকা আক্রান্ত হলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।

বর্তমানে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শুধুমাত্র পাঞ্জশির প্রদেশে এখন পর্যন্ত তালেবান যোদ্ধারা প্রবেশ করতে পারেনি। বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে কাবুল থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি উপত্যকা পাঞ্জশির। তালেবানকে মোকাবিলার ডাক দিয়েছে সেখানকার মানুষ।

গত ৪০ বছরের ইতিহাসে এই প্রদেশটি বিভিন্ন সময় নানা বহিরাক্রমণ প্রতিহত করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণ। এরপর ১৯৯০-র দশকেও তালেবানকে প্রতিরোধ করে উপত্যকার মানুষ। উঁচু পাহাড় ও গিরিখাতের কারণে অনেকটা দুর্গে পরিণত হয়েছে উপত্যকাটি। যে কারণে তা দখলে নিতে পারছে না তালেবান। সরু রাস্তার কারণে শত্রুরা প্রবেশের চেষ্টা করলে পাহাড় থেকে আগেই তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। তাই এখানে বহিরাগতদের প্রবেশ বেশ কঠিন।

আফগানিস্তানের প্রায় ৯৮ শতাংশ দখল করে ফেললেও পাঞ্জশিরে আটকে গেছে তালেবান। এমনকি পাঞ্জশিরে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের পতাকাও উড়িয়েছে সালেহ-মাসুদ বাহিনী।

১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আগ্রাসনকালে উপত্যকাটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানে প্রায় দশ বছর দখলদারি কায়েম রাখলেও সব রকম চেষ্টা-তদবির করেও পাঞ্জশির দখলে নিতে পারেনি সোভিয়েত সেনারা। তাদের সব কৌশলই ব্যর্থ করে দেন বর্তমান ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) নেতা আহমদ মাসুদের বাবা গেরিলা কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদ। যিনি পুরো আফগানিস্তানেই বিখ্যাত। সে সময় হাজার হাজার সেনা পাঠিয়ে, হেলিকপ্টার ও ট্যাংকযোগে হামলা চালিয়েও তাকে পরাজিত করতে পারেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন।

এরপর আসে তালেবান। ১৯৯৬ সালে যখন গোটা আফগানিস্তান প্রায় তালেবানের দখলে, তখনও পাঞ্জশিরে নিজেদের ভূমির নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল আহমেদ শাহ মাসুদের বাহিনী।

তালেবান ও আলকায়েদার বিরুদ্ধে বারবার গলা তোলায় ২০০১ সালে ওসামা বিন লাদেনের নির্দেশে আলকায়েদার আত্মঘাতি হামলায় খুন হতে হয় তাকে। কিন্তু তার পরেও পাঞ্জশির দখল করতে পারেনি তালেবান।

আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের একটি এই পাঞ্জশির। পাঞ্জশিরের অর্থ পাঁচ সিংহ। বলা হয়, দশম শতকে এই প্রদেশের এক পরিবারের পাঁচ ভাই একটি বাঁধ তৈরি করে বন্যার পানি ধরে রেখেছিল। গজনির সুলতাম মাহমুদের নির্দেশে সেই বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল বলে কথিত আছে। সেই পাঁচ ভাইয়ের সম্মানে এই প্রদেশের নাম রাখা হয় পাঞ্জশির।

এই প্রদেশটি একটি প্রাকৃতিক একটি দুর্গ। চারদিকে হিন্দুকুশের পর্বত। মাঝে একটুকরো সমতল ভুমি। এখানে মোট এক লাখ ৭৩ হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশ মানুষই জাতিতে তাজিক। দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে তাজিকদের।

সূত্র : দেশ রূপান্তর
এম এস, ৩১ আগস্ট

Back to top button