কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে শত শত পরিবার পানিবন্দি

কুড়িগ্রাম, ৩০ আগস্ট – উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এই দুই নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। স্থানীয় প্রশাসন থেকে বানভাসিদের জন্য খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হলেও সোমবার (৩০ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত তা বিতরণের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ধরলা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ব্রহ্মপুত্রের আশপাশে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। পাউবো জানায়, আজ বিকাল ৩টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এতে জেলার সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক ও সবজি ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই ইউনিয়নের দ্বীপ চরের কিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।

উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। জেলা সদরের সঙ্গে এই ইউনিয়নের একমাত্র সড়ক পাঁচগাছী-জালালের মোড়-মোল্লারহাট সড়কটির কয়েকটি অংশ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এই ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চর বালাডোবা, ৮ নং ওয়ার্ডের ফকিরের চর এবং ৯ নং ওয়ার্ডের মশালের চরের শতাধিক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়কসহ ফসলি জমি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকশ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন। স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাঁচ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেলেও তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় তা এখনও বিতরণ শুরু করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘তালিকা এখনও হয়নি। তালিকা প্রস্তুত করে দুই একদিনের মধ্যে বরাদ্দ করা খাদ্য সামগ্রী বানভাসিদের মাঝে বণ্টন করা হবে।’

এদিকে, চিলমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার রমনা ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে আমার ইউনিয়নের কয়েকশ ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। আমরা ৩৫০ পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তার চাহিদা দিয়েছি। বরাদ্দ পেলে তালিকা করে ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা স্থানীয় সংবাদকর্মী হোসেইন মোহাম্মদ মেহেদী জানান, ইউনিয়নের ফসলি জমি ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হলেও সোমবার বিকাল পর্যন্ত ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘এ ইউনিয়নের কড়াই বরিশাল, বিশারপাড়া, বইলমনদিয়ার খাতা, মনতোলাসহ বেশ কিছু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার নিচু এলাকাগুলো পানিতে প্লাবিত হলেও এসব এলাকার ঘরবাড়িতে এখনও পানি প্রবেশ করেনি। তবে চরাঞ্চল বলে স্বাভাবিক নিয়মে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন। প্রতিবার বন্যার পানি প্রবেশ করে বলে এ অঞ্চলের লোকজন সমতল থেকে বেশ উঁচু করে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। ফলে বন্যায় এসব ঘরে এখন সহসাই পানি প্রবেশ করে না।’

উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে এখনও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেনি। তবে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ভাঙন প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষের বসতভিটা। এমনটাই জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা। এছাড়া পানি বাড়ায় নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের রোপা আমনসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার ৯ উপজেলায় ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকে ভুক্তভোগীদের তালিকা করে অনতিবিলম্বে তা বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা পরিস্থিতির ওপর স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতসহ পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জরুরি সেবা নম্বর ৩৩৩ এ কল করলেও ভুক্তভোগীদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
এম ইউ/৩০ আগস্ট ২০২১

Back to top button