জাতীয়

তিস্তায় নতুন রেলসেতুর সাথে যুক্ত হবে বাংলাবান্ধা-সোনামসজিদ রেলপথ

মফিজুল সাদিক

ঢাকা, ২৫ অক্টোবর- নিরাপদ ও দ্রত রেল চলাচল নিশ্চিত করতে তিস্তা রেলসেতুর সমান্তরালে একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও নীলফামারীর ডোমার পর্যন্ত নতুন রেলপথও নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্যতম দীর্ঘ রেলসেতু তিস্তা রেলব্রিজ, যা রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলায় অবস্থিত। শত বছরের পুরনো সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫৪ মিটার। সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেলসেতু ও নতুন রেলপথ নির্মাণের আগে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে তিনটি প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদনসহ বিদ্যমান তিস্তা সেতুর সমান্তরাল নতুন একটি সেতুর জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিশদ নকশা এবং দরপত্র দলিল প্রণয়ন করা। সমীক্ষা প্রকল্পটি সরকারের ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা অর্থায়নে ২০১৮ সাল থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২১ সালের জুন মাসে সমীক্ষার কাজ শেষ হলেই মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরে সম্পন্ন করার জন্য ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুন মাসের নেওয়া হবে মূল প্রকল্প।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফর মিয়া বলেন, “তিস্তায় সমান্তরাল তৃতীয় বৃহত্তম রেলসেতু নির্মিত হবে। দীর্ঘদিনের পুরনো এ সেতুটি বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাংলাবান্ধা ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরকে নতুন রেলপথে যুক্ত করা হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর পরেই মূল প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ”

ফিজিবিলি স্টাডি কাজের ধীর গতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক বলেন, “নানা কারণে কাজে ধীরগতি হয়েছে। তবে আশা করি ২০২১ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হবে। ”

আরও পড়ুন: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র রজতজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

পাশাপাশি নীলফামারীর জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, অঞ্চলের জনসাধারণের রেল সেবাও বৃদ্ধি পাবে। জলঢাকা হয়ে ডোমার রেলস্টেশন হয়ে ভোটমারী রেলস্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মিত হবে।

সীমান্তবর্তী রেলপথের উন্নয়নে তিস্তা নদীর ওপর নতুন রেলওয়ে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নকশা ও টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া শুরু করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার্ভে, মাটি পরীক্ষা ও ট্রাফিক সার্ভের কাজ। কারণ সীমান্তবর্তী এলাকায় যেন ভারতীয় রেলওয়ের মতো মান বজায় রাখা যায় সেই কথাই চিন্তা করছে সরকার।

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সহজ রেল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ জন্য পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা রুটে ৫৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মিত হবে। এই রুটের সাথে সংযোগ দেওয়ার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হয়ে সোনা মসজিদ ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

ফলে এটি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) রেল সংযোগের অন্যতম রুট হবে বলে জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। স্থল বন্দরটিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে যাত্রী ছাড়াও আমদানি-রফতানি মালামাল পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানির জন্য পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপাল মাত্র ৬১ কি.মি ভুটান মাত্র ৬৮ কি.মি এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কি.মি দূরত্বে অবস্থিত। এই একটি বন্দর, যা ৫টি বন্ধু-প্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে। সেই জন্যই বাংলাবান্ধা হয়ে চারটি দেশের মধ্যে রেলসংযোগ স্থাপন করতে চায় সরকার।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সড়কপথে ভারী মালামাল পরিবহন যাত্রী পরিবহন চলাচল করায় মহানন্দা সেতুসহ জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হলে উভয় স্থল বন্দরে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে। উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হবে।

জানা গেছে, ভারতীয় অংশেও রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সে দেশের সরকার। উভয় পাশে রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ থেকে ভুটানের সীমান্তবর্তী জলপাইগুড়ির হাসিমারা স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চালু করা যাবে। একইভাবে নেপালের সীমান্তবর্তী বিহার রাজ্যের জগবানি স্টেশন পর্যন্তও ট্রেন চালু করা যাবে। ওই দুই স্টেশন থেকে সড়কপথে ভুটান ও নেপালে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এছাড়া জগবানি থেকে নেপালের অভ্যন্তরে ২০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সূত্র : বাংলানিউজ
এন এইচ, ২৫ অক্টোবর

Back to top button