এখন চলছে ডেঙ্গুর ‘ডেনভি-৩’ ধরনের দাপট: বিসিএসআইআর
ঢাকা, ২৯ আগস্ট – ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ‘ডেনভি-৩’ ধরনে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।
রোববার বিসিএসআইআর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিসিএসআইআরের গবেষণাগারে ২০ ডেঙ্গু রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, তারা সবাই ভাইরাসটির ডেনভি-৩ ধরনে আক্রান্ত ছিলেন। বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী বলেন, ডেঙ্গু মিউটেশন সংক্রান্ত তেমন গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশনে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ গবেষণার জন্য রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও অধিক সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক সেলিম খান। তিনি বলেন, আমরা ২০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করে দেখেছি, প্রতিটি ডেনভি-৩। এই সেরোটাইপ-৩-এর মাধ্যমে ঢাকার রোগীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, দ্রুত তাদের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলোজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, দেশে গত ১০ বছরে ডেনভি-১ ও ২ সেরোটাইপে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এবার দেখা যাচ্ছে ডেনভি-৩ ধরনই বেশি। দেশে এই ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। যারা আগে ডেনভি-১, ২-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারা নতুন করে ডেনভি-৩-এ আক্রান্ত হলে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছেন। তাই এবার মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে জ্বর ছাড়া তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ হয় না। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে এই ভাইরাসে মৃত্যুহার বেড়ে যাবে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের মধ্যে ডেনভি-১ ও ৪-এর ক্ষতি করার ক্ষমতা ডেনভি-২ ও ৩-এর তুলনায় বেশি।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বক্তব্য দেন।
হাসপাতালে ভর্তি আরও ২৫২ :এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৫২ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০২ জন। অন্যরা ঢাকার বাইরে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৮৫৭ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন আট হাজার ৬৯০ জন। বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এক হাজার ১২৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৯৮০ জন। এ ছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গু সন্দেহে মারা গেছেন ৪২ জন।
সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অব্যাহত : ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যেসব স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা ও মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব স্থাপনার মালিককে বিভিন্ন অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে। রোববার অভিযান চালিয়ে ১০ ভবন মালিককে এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২৯ আগস্ট ২০২১