ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রলার ডুবি: উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২৮ আগস্ট – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দুই ট্রলারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধার ছাড়াই দুর্ঘটনার ২২ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ডুবুরী দলের (বিআইডব্লিউটিএ) ৪ জন ডুবুরি ও ফায়ার সার্ভিসের ২২ জনের একটি টিম পুনরায় উদ্ধার অভিযানে নামে। সকাল পৌনে ১০টায় নিখোঁজ হওয়া শিশু নাশরাকে (৩) উদ্ধার করা হয়। নাশরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার উত্তর পৈরতলার হারিজ মিয়ার মেয়ে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় নিখোঁজ হওয়া শিশু নাশরার লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

নৌকা ডুবিতে নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকূট গ্রামের আবদুল্লাহর মেয়ে তাকওয়া (৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে আরিফ বিল্লাহ মামুন ভূঁইয়া (২০), চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরারগাঁওয়ের মৃত কালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই এলাকার জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), জজ মিয়ার মেয়ে মুন্নি (৬), একই ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাক ওরফে মন মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম, বিজয়নগর উপজেলার আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জলী বিশ্বাস (৩০), পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে ত্রিদিবা (২), বিজয়নগর উপজেলার গেরারগাঁওয়ের মৃত আবদুল হাসেমের স্ত্রী কমলা বেগম ওরফে রৌশনারা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ পৈরতলার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), একই উপজেলার গাছতলা গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের জারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), পৌর এলাকার উত্তর পৈরতলার ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলী বেগম, একই এলাকার হারিজ মিয়ার মেয়ে নাশরা আক্তার (৩), পৌর এলাকার দাতিয়ারার হাজী মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মীম (১২), ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার রামগোপালপুর গ্রামের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৫৫), বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত হাজী আবদুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম শিরু (৫৮), বিজয়নগর উপজেলার বাদেহারিয়া গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে মাইদা আক্তার-(৬), ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার রামগোপালপুর গ্রামের শাওন মিয়ার ছেলে সাজিদ (৩), বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের বড়পুকুরপাড় গ্রামের সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার ও বিজয়নগর উপজেলার সোনাবর্ষীপাড়া গ্রামের আবদুল বারী ভূঁইয়ার স্ত্রী নুসরাত জাহান।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণে ওই নৌ-পথে নৌ-চলাচল সাময়িকভাবে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাবেয়া আফসার সায়মা বলেন, আমরা আপাতত নৌকা চলাচল বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আবার চালু করা হবে।

অপরদিকে নৌকা ডুবিতে মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার দুপুরে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের মৃত আবদুল হাসিমের ছেলে সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে বিজয়নগর থানায় মামলা করেন। পুলিশ মামলার আসামি বালুবাহী ট্রলারের চালক সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের শোলাবাড়ি গ্রামের আফজল মিয়ার ছেলে জমির মিয়া ৩৩), ট্রলারের শ্রমিক একই এলাকার মৃত আবদুল করিমের ছেলে মো. রাসেল (২২), একই এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (২২), মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মো. সোলায়মান (৬৪) ও বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের কালারটেক গ্রামের মৃত হাজী তালেব হোসেনের ছেলে মিস্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ নিহতদের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। ঘটনাস্থলে থাকা তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা নৌকার ডিজাইন, ফিটনেস, অতিরিক্ত যাত্রী ছিল কি না- এসব সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তিনি আরও বলেন, ডুবুরী দল নিশ্চিত করেছে নৌকার ভেতরে আর কোনো মরদেহ নেই। এ ছাড়া ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধারের জন্য এ মুহূর্তে আমাদের কাছে তেমন কোনো সরঞ্জাম নেই। তাই নৌকাটির দুর্ঘটনাস্থল লাল কাপড় দিয়ে চিহ্নিত করে উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, বালি বোঝাই ট্রলারের মাঝিসহ ৩ জনকে শুক্রবার রাতে এবং শনিবার ২ জনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র আশুগঞ্জ ভৈরব নৌবন্দরের উপ-পরিচালক শহীদুল হক জানান, এ নৌপথের কোনো নৌযানের নিবন্ধন এবং অনুমোদন নেই। তারা অবৈধভাবে নৌযান চালায়। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় ও অদক্ষ চালকের কারণেই এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২৮ আগস্ট ২০২১

Back to top button