ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবি, ১৯ লাশ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২৭ আগস্ট – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইস্কা বিলে নৌকাডুবিতে ১৯ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পৗনে ৬টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে ভাতের খোলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নয় নারী ও তিন শিশু রয়েছে। আহত অবস্থায় ১৫ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ও পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে যান।

নিহত কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

তারা হলেন, চম্পকনগরের গেরাগাওয়ের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৫৮), তার আত্মীয় আবদুল হাশিম মিয়ার স্ত্রী রওশন আরা (৬৫), তার মেয়ে ও জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৩০), পত্তনের বড়পুকুর পাড় গ্রামের সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী রুবিনা বেগম (৪০), পত্তনের আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনা (৪২), ব্রাহ্মবাড়িয়ার পৈত্তলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা (৩৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের হাজী মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১৩), বিজয়নগরের মুকুন্দপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের স্ত্রী শারমিন (১৮)।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার শিকার নৌকাটি স্থানীয় সোনা মিয়া মাঝির। প্রতিদিনের মতো এটি চম্পকনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিল। শেষ খেয়ায় শুক্রবারও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে নৌকাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে ভাতের খোলা নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলার যাত্রীবাহী নৌকাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা প্রাথমিকভাবে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৯ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে আসতে পারেনি।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে জানান, এখন পর্যন্ত ১৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের সদর হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসা খরচ দেওয়া হবে।

তিনি জানান, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সার্বিক) রুহুল আমিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার কবলে পড়া নৌকাটি চমম্পকনগর ফতেহপুর গ্রামের সোনা মিয়া মাঝির নৌকা। প্রতিদিন এ নৌকায় চমম্পকনগর থেকে যাত্রীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান। শুক্রবার বিকেলে শেষ খেয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে নৌকাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বালুবাহী একটি ট্রলার ধাক্কা দিলে সোনা মিয়ার নৌকাটি ডুবে যায়। এখন পর্যন্ত ১৯ লাশ উদ্ধার হয়েছে। আমরা বালুবাহী ট্রলার আটক করেছি। এর চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ভূইয়া জানান, খবর পাওয়ার পরপর আমরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করি। কিশোরগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী ডুবুরি দল রওনা দিয়েছে। তারা আসলে উদ্ধার কাজ আরো বিস্তৃতভাবে করা যাবে।

উদ্ধার হওয়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, শেষ খেয়া ছিল বলে ইঞ্জিনচালিত স্টিলের নৌকাটিতে ২০০ যাত্রী উঠে পড়ে। বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে ভাতের খোলা নামক জায়গায় আসলে বালুবোঝাই একটি নৌকা তাদের নৌকাকে ধাক্কা দিলে সেটি ডুবে যায়। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

পত্তন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, তার আপন ছোট ভাই সার ব্যবসায়ী নিখোঁজ রয়েছেন।

দুর্ঘটনার শিকার নৌকার যাত্রী আলি আক্তার জানান, তাদের নৌকায় দু’শর মতো যাত্রী ছিল।

আখি বেগম বলেন, তিনি স্বামী নান্নু মিয়া, তার বড় ছেলে ও কোলে এক বছরের বাচ্চা নিয়ে নৌকায় ওঠেন। হঠাৎ ধাক্কায় তারা সবাই নৌকা থেকে পড়ে যান। কোলের শিশুসহ তিনি পাড়ে উঠে আসলেও তার আট বছর বয়সী হাফেজি মাদ্রাসার ছাত্র নিখোঁজ রয়েছে। তার স্বামী নান্নু মিয়া আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সূত্র: দেশ রূপান্তর
এম ইউ/২৭ আগস্ট ২০২১

Back to top button