‘অংশগ্রহণমুলক অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা তালেবানের
কাবুল, ২৭ আগস্ট – তালেবান বলছে, আফগানিস্তানে একটি ‘অংশগ্রহণমুলক অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কাবুলে নতুন সরকার কেমন হবে – এ বিতর্কের মধ্যে তালেবানের একাধিক সূত্র আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছে। ওই তালেবান সূত্র জানায়, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে নেয়ার জন্যও যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে বার বার বলছে।
গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আশরাফ গানি সরকারকে হটিয়ে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর দু’একদিন পরই বিদেশ থেকে আফগানিস্তানে ফিরতে শুরু করেন সশস্ত্র সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এদের মধ্যে তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারদারও রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, মোল্লা বারাদার হতে পারেন নতুন তালেবান সরকারের প্রধান।
তালেবানরা ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তাদের সরকার চলবে শরিয়া আইনে; অর্থাৎ আফগানিস্তানের নতুন সরকার গণতান্ত্রিক হবে না। নারীর অধিকারের প্রশ্নেও শরিয়ার কথা উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার হবে সব জাতি ও নৃগোষ্ঠির নেতাদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে। সূত্র জানায়, নতুন সরকার গঠনের জন্য এ ধরনের অন্তত এক ডজন নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী এ সরকার কতোদিন আফগানিস্তান শাসন করবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
চার কোটি মানুষের দেশ আফগানিস্তানে বহু জাতি ও নৃগোষ্ঠির মানুষের বাস। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই এ গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে সংঘাত লেগে থাকে। তালেবান নেতাদের অধিকাংশই জাতিগত পশতুন সম্প্রদায়ের, যারা আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠি।
আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশই পশতুন। আফগানিস্তানের সুন্নি মুসলিমরা পশতু ভাষাই কথা বলে এবং অষ্টাদশ শতক থেকে আফগান রাজনীতিতে তাদের প্রভাবই বেশি।
কাতারের দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমকে তালেবানের ওই সূত্র জানিয়েছে, ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তানের নেতৃত্ব দিতে গঠিত ওই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন একজন ‘আমির-উল মোমিনিন’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালেবানের ওই নেতারা জানান, একটি সর্বোচ্চ নেতৃত্বশীল কাউন্সিল গঠিত হবে, যেটি ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করবে এবং মন্ত্রী নির্বাচিত করবে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদার কাবুলে রয়েছেন এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব কান্দাহার থেকে কাবুলে পৌঁছেছেন।
সূত্র বলছে, তালেবানরা তাদের সরকারে তাজিক ও উজবেক জাতিগোষ্ঠির প্রতিনিধিসহ নতুন মুখ যোগ করতে চাইছে।
তালেবান নেতারা জানান, নতুন সরকারে সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও সাবেক আশরাফ গানি সরকারের আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে বলছে। তালেবানদের সঙ্গে আশরাফ গানি সরকারের আলোচক প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন এ আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ।
নতুন সরকার গঠনের এ তোড়জোড়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১১০ জন নিহত হন। জঙ্গি সংগঠন আইএসকেপি এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। হামলার নিন্দা জানিয়েছে তালেবান।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২৭ আগস্ট ২০২১