ইসলাম

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে বান্দার দায়িত্ব

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘সাত আসমান, জমিন এবং এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সবই তার (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। সৃষ্টিলোকে এমন একটি জিনিসও নেই যা তাঁর (আল্লাহর) প্রশংসা, পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের এ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৪৪)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, শুধু মানুষ ও জ্বীনই আল্লাহ তাআলার প্রশংসা তথা ইবাদত করে না বরং আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিই তাদের নিজ নিজ ভাষায় তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করে থাকে। পশুপাখির কিচিরমিচির, হাক-ডাকও আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা বর্ণনা, তাসবিহ-তাহলিলের ভিন্ন রূপ।

যদিও সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ও পবিত্রতা বর্ণনা করে; তথাপি সমগ্র সৃষ্টিকে তিনি মানুষের উপকার ও কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জ্বীন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে মানুষের জন্য ফরজ ইবাদত নির্ধারিত করেছেন। পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগির ব্যবস্থাও রেখেছেন। যারা ফরজ ইবাদত পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত বন্দেগি করবে তারাই আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবেন। তখনই আল্লাহ তাআলা ওই সব বান্দাকে ভালোবাসেন। আর আল্লাহর হুকুম পালনকারী বান্দাগণ তার নৈকট্য লাভে ধন্য হন।

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকারী বান্দার নফল ইবাদতের ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে, ‘নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার এত নিকটতম হয় যে, আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। আমি যখন তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শোনার কান হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে কাজ করে। আমি তার পা হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে চলাচল করে। যদি আমার বান্দা আমার কাছে কিছু চায় আমি তাকে তখনই তা দান করি। যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন। যারা তাঁর ইবাদত-বন্দেগি ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল তথা অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগি করবে তারাই আল্লাহর একান্ত বন্ধু রূপে পরিগণিত হবে।

আরও পড়ুন: জানাজার নামাজের সংক্ষিপ্ত নিয়ম

পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা ভালোবাসা লাভ করতে হলে দুনিয়ার প্রতিটি কাজই হবে তাঁর জারিকৃত বিধান অনুযায়ী। প্রতিটি কাজই হবে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক। হোক তা চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য যে কোনো কাজ।

আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন তথা ভালোবাসা লাভের জন্য ফরজ ইবাদতের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে গভীর রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।

রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল আদায় করতে হবে। দিনের বেলায় সিয়াম সাধনায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

ফরজ ইবাদত পালনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর নৈকট্য লাভে গভীর রাতে নামাজ আদায়কারীর প্রতি আল্লাহ তাআলার খাস রহমত বর্ষিত হয়। নফল ইবাদতকারী ব্যক্তির প্রতি ওই সময় তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

যখনই মানুষ ফরজ পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন; তখনই বান্দার শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি, চলাফেরা কাজ-কর্ম সবই আল্লাহর কাজে পরিণত হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার যাবতীয় পেরেশানি ও লোভ-লালশা থেকে হেফাজত করে তার নির্দেশিত ফরজ ইবাদত পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন।

আল্লাহ তাআলা সঙ্গে একান্ত দিদার লাভে এবং দুনিয়াতে মাওলাকে রাজি খুশি করে তাঁর একান্ত নৈকট্য অর্জনে তাঁর নির্দেশিত পথ ও মতের ওপর একনিষ্ঠ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এন এইচ, ২৫ অক্টোবর

Back to top button