জাতীয়

ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ

লুৎফর রহমান কাকন

ঢাকা, ২৭ আগস্ট – ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ- এমন আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কয়েক দফা বাংলাদেশ-ভুটান যোগাযোগও হয়েছে শীর্ষ পর্যায়ে। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি দুই দেশ। আশার খবর হলো- সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. শেরিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশও তৎপর হয়েছে প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে। ফলে ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির পদক্ষেপ বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভুটান সরকারের পক্ষ থেকে একটি এমওইউর খসড়া পাঠানো হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। সেখানে ভারতসহ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এ বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শক সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে অনেক দিন ধরে। তবে ভৌগোলিক কারণে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সেখানে বিনিয়োগ কঠিন বিষয়। ফলে ভারতসহ ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করতে যাচ্ছে। সেখানে ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানি জেএমআর বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনে আনবে। মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, তবে বাংলাদেশ চায় ভুটানে সরাসরি বিনিয়োগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। অন্য কোনো কোম্পানি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চায় না। সেভাবেই বিদ্যুৎ বিভাগ আলোচনা করছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ভৌগোলিক এবং ভূরাজনৈতিক কারণে ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি থাকতে হবে। কারণ ভারতের ওপর দিয়েই বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে বাংলাদেশকে। ফলে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ভারতে ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল ভুটানের কুড়ি-১ নামের একটি প্রকল্পে এক হাজার ১২৫ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের। বিষয়টি নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তির (এমওইউ) খসড়া চালাচালি হয়। তবে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। ফলে এখন আবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিন দেশ ঐকমত্যে পৌঁছলে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও নেপালে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছেন। এর মধ্যে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয় কিছুটা এগোলেও ভুটানের বিষয়টি এখনো অনেকদূর। প্রসঙ্গত, আগামী মাসের ১৩ ও ১৪ সেপ্টম্বর নেপাল ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

একাধিক সূত্রে জানাযায়, বর্তমানে ভুটান দেড় হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটি হলো তালা ১ হাজার ২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প। রয়েছে চুকা ৩৩৬ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ ছাড়া ৪০ থেকে ১০০ মেগাওয়াটের কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। ভুটানের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই ভারতের অনুদানে ও বিনিয়োগে নির্মিত। উৎপাদিত বিদ্যুতের অধিকাংশই ভারতে রপ্তানি হয়। ভারত এখানে পুতাংসাংসু ১ ও ২ নামের মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ায় হিমালয়কন্যাখ্যাত ভুটান ও নেপালের সবচেয়ে বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এই সম্ভাব্য ক্ষমতার ১০ শতাংশও এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি ভূরাজনৈতিক জটিলতার কারণে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, এই দুই দেশে প্রায় ৮৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। ভুটানের আয়তন মাত্র ৩৮ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৬ জন।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এইচ, ২৭ আগস্ট

Back to top button