হাবিবের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা, শফি-আতিকের ভরসা তৃণমূল
সিলেট, ২৫ আগস্ট – সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৪ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনকে সামনে রেখে করোনা সংক্রমণের মধ্যেও বসে নেই প্রার্থীরা। প্রচারণার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেও বসে নেই প্রার্থীরা। নানা কৌশলে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে দরের এক ডজনের বেশি কেন্দ্রিয় নেতা অংশ নিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে না পেলেও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। আর দল থেকে বহিস্কার হওয়ায় দলীয় নেতারা দূরত্ব বজায় রেখে চলায় তৃণমূলের কর্মীদের উপর আস্থা রেখে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী।
গত ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচন। ভোটগ্রহণের দুইদিন আগে লকডাউনের মধ্যে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের ৬ জন আইনজীবী ও নির্বাচনী এলাকার ৭ জন ভোটার উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। ওই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত নির্বাচন স্থগিত করেন। একই সাথে প্রচারাণা বন্ধেরও নির্দেশ দেয় ইসি। গত সোমবার ইসি ৪ সেপ্টেম্বর আসনটিতে ভোটগ্রহণের তারিখ ধার্য্য করে প্রচারণার সময় বেঁধে দেয় ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত। কিন্তু নির্বাচন স্থগিতের ঘোষনার পর থেকে ইসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রার্থীরা নানা কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন। বিশেষ করে শোকের মাস আগস্টকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে হাবিবের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট নগরে শোক দিবসের বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে তারা উপ নির্বাচনে হাবিবকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের ডেকে হাবিবের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ সংগঠনের প্রায় একডজন নেতা সিলেট এসে হাবিবের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যান। এদিকে, হাবিবের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে আজ বুধবার সিলেট আসছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ও কড়া নির্দেশনার পর সিলেট-৩ আসনের অন্তর্ভক্ত দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার নেতাকর্মীরা আধাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। হােিবর পক্ষে তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, সিলেট-৩ আসনভ’ক্ত এলাকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ নৌকা প্রতীকের পক্ষে একাট্টা। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। উন্নয়নের স্বার্থে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ঐক্যের ফসল হিসেবে নৌকা প্রতীকের বিজয় হবে।
এদিকে, জাতীয় পার্টির পক্ষে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কাজ করলেও এখন পর্যন্ত ঢাকা থেকে কোন কেন্দ্রীয় নেতাকে সিলেট আসতে দেখা যায়নি। তবে একসময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত লাঙ্গল প্রতীকের নিষ্ক্রিয় সমর্থকরা এবার অনেকটা সরব। মানুষের এই আগ্রহকে কাজে লাগাতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আতিক। আতিকের ভাষ্যমতে, এবার লাঙ্গলের পক্ষে গণজোয়ার দেখছেন তিনি। এই গণজোয়ার দেখে ঢাকায় বসে থাকতে পারছেন না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু কোন কিছুই লাঙ্গলের বিজয় ঠেকাতে পারবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অপরদিকে, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় বহিস্কৃত হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী। বহিস্কার হওয়ায় তার পক্ষে মাঠে নেই দলের নেতারা। তবে পদবীহীন তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপির কর্মী ও সমর্থকরা তার পক্ষে কাজ করছেন। সাংসদ থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে ভ’মিকা রাখা, ব্যক্তি ইমেজ ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের চেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন শফি।
শফি আহমেদ চৌধুরী বলেন, মানুষ উন্নয়ন চায়। এজন্য তারা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানুষকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিতে চাইছে। দলের পদবীধারীরা প্রকাশ্যে তার পক্ষে না থাকলেও অনেকেই তার পক্ষে কাজ করছেন। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেরই বিজয় হবে বলে আশাবাদী তিনি।
সূত্র : সিলেটভিউ
এন এইচ, ২৫ আগস্ট