জানাজার নামাজের সংক্ষিপ্ত নিয়ম
পৃথিবীতে অনেক বিষয় নিয়ে মানুষের মতবিরোধ হলেও জীবের মৃত্যু নিয়ে কারো কোনো মতবিরোধ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে সবাই এতে অভিন্ন মত পোষণ করেন।
পবিত্র কোরআনের ভাষ্য তাতে অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করেছে। মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তাকে ঘিরে কিছু কাজ জীবিতদের করতে হয়। মৃত ব্যক্তির সৎকার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি একটি মানবিক কর্মও বটে। একজন মুসলিমের মৃত্যুবরণের পর তাকে কবরস্থ করাসহ জীবিত মুসলিমদের কয়েকটি কাজ করতে হয়। তন্মধ্যে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো এবং জানাজার নামাজ পড়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জানাজার নামাজ পড়া অনেক পূণ্যের কাজ। হাদিসের ভাষ্যমতে জানাজার নামাজ আদায় করলে উহুদ পর্বত সমান সওয়াব ব্যক্তির আমলনামায় যোগ হয়। ইসলামি পরিভাষায় জানাজার নামাজ আদায় করা- ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ সমাজের কিছু মানুষ তা আদায় করলে সবাই দায়িত্ব থেকে মুক্তি লাভ করেন। আর কেউ যদি এই কাজ না করে, তাহলে সবাই পাপের ভাগিদার।
ভারতীয় উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে জানাজার নামাজ বলে যে ইবাদতটি পরিচিত, আরব দেশের জনগণ সেটিকে
সালাত আলাল মাইয়েত বা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া নামেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। জানাজার নামাজ মূলতঃ মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।
নামাজ ফার্সি ভাষা হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে। শব্দটি মূলতঃ সালাত শব্দের অর্থ বহন করে। এই ক্ষেত্রে সালাত শব্দটি পারিভাষিক অর্থে নয় বরং শব্দটির আভিধানিক মর্ম দোয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং সালাতুল জানাজা বা জানাজার নামাজ অর্থ হবে- মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে ছবি আপলোড করলে কি গুনাহ হবে?
জানাজার নামাজে মোট চারবার আল্লাহু আকবার বলতে হয়। শুরু করার সময় একবার আল্লাহু আকবার বলে অন্যান্য নামাজের মতো হাত বাঁধতে হয়। এরপর প্রতিটি দোয়ার পর একটি করে মোট চারটি তাকবির দিতে হয়। এরপর আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে উভয়দিকে সালাম ফিরাতে হয়। জানাজার নামাজে মূলতঃ তিনটি স্বতন্ত্র দোয়া পাঠ করার বিধান রয়েছে। দোয়া তিনটির প্রতিপাদ্য ভিন্ন ভিন্ন। সংক্ষেপে তা হলো- আল্লাহর প্রশংসা, হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি দরুদ এবং সবশেষে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আবেদন।
এই হলো- জানাজার নামাজের মূল বিষয়বস্তু। অনেকেই জানাজার নামাজে দোয়াগুলোকে দুর্বোধ্য মনে করে সেগুলো এড়িয়ে যান। আসলে কিন্তু ব্যাপারটি তেমন জটিল কিছু নয়। নামাজ পড়তে জানা সব মানুষের জানাজার নামাজের প্রথম দোয়া দুটি জানা থাকে।
আমরা অন্য নামাজের শুরুতে সানা (সুবহানাকা…) নামের যেই দোয়াটি পড়ি সেটিই একটি মাত্র অতিরিক্ত বাক্যসহ (ওয়া জাল্লা সানায়ুকা) জানাজার নামাজে সর্বপ্রথম পড়তে হয়। ওই অংশটুকু না পড়লেও জানাজার নামাজ আদায় হয়ে যায়। এরপর পাঠ করতে হয় দরুদ শরিফ। আমরা নামাজে যেই দরুদ পাঠ করি সেটিই পড়তে হয়- জানাজার নামাজে। সবশেষে যে দোয়াটি পড়তে হয়- সেটি কষ্ট করে মুখস্ত করে নিলেই হলো। আর মুখস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত- আল্লহুম্মাগফির লাহু আল্লাহুম্মারহামহু পড়লেও চলবে। তবে মৃত যদি নাবালক হয়, সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র দোয়া পড়তে হয়।
জানাজা মূলতঃ দোয়া। তাই তা শেষ করে ততক্ষনাৎ হাত উঠিয়ে দোয়ার প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহর দরবারে কোনো দোয়া কবুল হওয়ার জন্য হামদ-সানা অত্যন্ত কার্যকর দুটি আমল। আর জানাজার নামাজে উভয়টিই বিদ্যমান। তাই এই দোয়া কবুল হবে- এমনটা আশা করা স্বাভাবিক।
মনে রাখতে হবে, হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) ভাষ্যমতে জানাজা মুসলমানের অন্যতম হক বা অধিকার। এতে অংশ নিলে পরকালের কল্যাণ লাভের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানের অধিকার সংরক্ষণের মতো মহৎ একটি কর্ম সম্পাদিত হয়।
এন এইচ, ২৪ অক্টোবর