জাতীয়

বাংলাদেশে তালেবানের উগ্র সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা করতে পারে

ঢাকা, ১৬ আগস্ট – দুই দশক পর আফগনিস্তানের ক্ষমতায় বসতে চলেছে তালেবানরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে একরকম পালিয়েই গেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এই প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলাপ-আলোচনা। এ সব বিষয়ে বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টি নিয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় পত্রিকায় নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্নেষক হুমায়ুন কবীর। পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন করে উত্থানে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

তবে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সতর্ক থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তালেবান ধর্মের অপব্যাখ্যা দেয়া উগ্রবাদী শক্তি এবং এর আগে তাদের উগ্র সমর্থক গোষ্ঠী বাংলাদেশেও দেখা গেছে। এই গোষ্ঠী অত্যুৎসাহি হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে সে বিষয়টিতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। একই সঙ্গে আফগান রাজনীতি ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রভাববলয়ের সমীকরণের বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

তিনি বলেন, শঙ্কিত হওয়ার কারণ দেখা যাচ্ছে না। এবারের যে আফগান তালেবান, তাদের চেহারা ১৯৯৬ সালের মতো উগ্রবাদী এবং পুরোপুরি সামরিক নয়; বরং তাদের বর্তমান চেহারায় একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিচয় দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ভয়ংকর উগ্রবাদী চেহারার কারণে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন একটা শক্তি ছিল।

কিন্তু এবার তাদের যে রাজনৈতিক চেহারা, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ আন্তর্জাতিক প্রভাববলয়ের প্রচ্ছন্ন সমর্থনও দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। ফলে এবার তালেবান ক্ষমতা নিলেও দেশ পরিচালনায় তাদের আগের চেহারা দেখা যাবে না, সেটা ধারণা করা যায়।

তালেবান ধীরে ধীরে বর্তমান বিশ্বের সমসাময়িক বাস্তবতার একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান সংহত করার উদ্যোগ নেবে, সে ধারণাও করা যায়। তবে বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তি সম্পাদনের টেবিলে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেই এবং তালেবানের মুখপাত্র সোহাইল শাহিন। চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল আফগান যুদ্ধের অবসান। ‘আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি’ শিরোনামে ওই চুক্তিতে মূল চারটি ধারা ছিল। চুক্তিতে তালেবান নিজেদের ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’ হিসেবে উল্লেখ করে। চুক্তির মূল দুটি ঘোষণায় বলা হয়, আল কায়দাসহ কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে তালেবান নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপনাও তারা করবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হবে, এটা বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপনা তারা করবে। চুক্তিতে আন্তঃআফগান বহুপক্ষীয় আলোচনা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা ঘোষণার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে এই রূপরেখা ঘোষণার পর অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও তালেবানের পক্ষ থেকে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র : আরটিভি
এন এইচ, ১৬ আগস্ট

Back to top button