এবার পর্নোগ্রাফি নিয়ে মুখ খুলছেন রাজ
ঢাকা, ১৫ আগস্ট – প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র অফিস। সেই কক্ষটিকে মূলত পর্নো ভিডিও তৈরির কাজে ব্যবহার করতেন তিনি। বিভিন্ন উঠতি মডেলদের ব্যবহার করে বানাতেন এসব ভিডিও। পরে সেগুলো বিক্রি করে রাজ হাতিয়ে নিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। বনানী থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন রাজ।
নিজ বাসা থেকে গত ৪ আগস্ট রাতে সহযোগী সবুজসহ রাজকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তার অফিস কক্ষে পাওয়া যায় পর্নোগ্রাফির কাজে ব্যবহৃত বিশেষ বিছানা, সেক্স টয়সহ বিকৃত যৌনাচারের বিভিন্ন সামগ্রী। এসব সরঞ্জাম দেখে র্যাব তখন জানিয়েছিল, রাজ মাল্টিমিডিয়ার ওই অফিসে পর্নোগ্রাফি তৈরি করা হতো বলেই ধারণা। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা আয় করতেন এ প্রযোজক। এর পরই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনের পাশাপাশি পর্নোগ্রাফি আইনেও একটি মামলা করা হয় বনানী থানায়। এ দুই মামলায় গত ১০ আগস্ট রাজের ফের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মাদকদ্রব্য আইনের মামলার দুদিনের রিমান্ড শেষ হলে সহযোগীসহ তাকে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় রিমান্ডে নেয় সিআইডি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মিলছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
রাজকে গ্রেপ্তারের আগে ওইদিন বনানীর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চিত্রনায়িকা পরীমনিকেও। কয়েকদফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে ঠাঁই হয়েছে ওই সময়ে গ্রেপ্তার আরও কয়েকজনেরও। বর্তমানে প্রযোজক রাজ ও তার সহযোগী সবুজ এবং ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর ও মিশু হাসান সিআইডির রিমান্ডে রয়েছেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, পর্নোগ্রাফি চক্রের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসছে রাজের বক্তব্যে। কিন্তু তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছে সিআইডি। এ ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরও রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির নাম দিয়েছেন। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিআইডির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ‘বর্তমানে সিআইডির হেফাজতে চারজন রয়েছেন। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে দুই দফা রিমান্ড শেষে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মডেলের পরিচয় দিলেও তাদের বর্তমান পেশা মডেলিং নয় বলে নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি। মূলত মডেল পরিচয়ের আড়ালে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের প্রধান কাজ।
তদন্ত সূত্র অবশ্য বলছে, পিয়াসা নিজেকে মডেল হিসেবেই বোল্ডলি উল্লেখ করেন জিজ্ঞাসাবাদে। বিভিন্ন কাজের উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। তবে সেগুলো অনেক পুরনো। বর্তমানে তিনি কোনো কাজ পাননি বলে কাজ করেনি বলেই জানান। আবার নিজেকে কখনো কখনো ব্যবসায়ী বলেও উল্লেখ করেছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পিয়াসা ও মৌ কেউই মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের মোবাইলের কথোপকথন, ব্যাংক লেনদেনÑ এসব চেক করা হচ্ছে। বেশ কিছু তথ্য মিলছে। দেশের বিভিন্ন ক্লাব, রিসোর্টে তাদের যাতায়াত ছিল, দেশি-বিদেশি অনেকের সঙ্গেই তাদের সখ্য ছিল। আবাসন ব্যবসায়ী, গাড়ি ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ীসহ অনেকের সঙ্গেই তাদের বিভিন্ন বিষয় কথা হতো। সেসব কথোপকথন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এদিকে পিয়াসা ও মৌসহ কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর তাদের ‘মডেল’ বলায় লিখিত বিবৃতি দেয় অভিনয় শিল্পী সংঘ। সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দু-একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কিনা সেই ভাবনাটা জরুরি হয়ে উঠছে।’
এ বিষয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, ‘মডেলিংয়ের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা থাকলেও কতটি কাজ করলে একজনকে মডেল বলবেন, সেটা তো নির্দিষ্ট নয়। কেউ একটা কাজ করেও বিখ্যাত হন, পরিচিতি পান। আবার কেউ একাধিক কাজ করেও পরিচিত পান না। পিয়াসার কিছু মডেলিংয়ের তথ্য পেলেও মৌয়ের কিছুই মেলেনি। তারা মডেল না অভিনেত্রী, সেটা অবশ্য বিষয় নয়। তাদের আয়ের উৎস যেটা পাওয়া যাবে, সেটা নিশ্চিত হলেই তাদের পেশাও নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে পিয়াসা মাহবুবকে গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার ঘর থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা ও ৯ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। ফ্রিজে পাওয়া যায় সিসা তৈরির কাঁচামাল। একই দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মৌ আক্তারকে। তার বাসা থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো তদন্ত করছে সিআইডি।
সূত্র : আমাদের সময়
এন এ/ ১৫ আগস্ট