তালা না খুলেও চুরি করেন তারা!
নারায়ণগঞ্জ, ১৪ আগস্ট – নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানা এলাকা থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত গার্মেন্টসের মালামালসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোরচক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। এ সময় বিপুল পরিমাণ গার্মেন্টস সামগ্রী, দুটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব।
আজ শনিবার দুপুরে র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস মালামাল বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নেওয়ার পথে কিছু কিছু কাভার্ড ভ্যান হতে প্রায় ৩৫-৪০% দামি গার্মেন্টস মালামাল উধাও হয়ে যাচ্ছে।’
এমন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ ওই চোরাকারবারীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল নেওয়ার সময় পথিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার একটি পরিত্যাক্ত রি-রোলিং মিলসে কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে সংঘবদ্ধ একটি চোরচক্র কাভার্ড ভ্যানের তালা না খুলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩৫-৪০% মালামাল চুরি করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এমন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার তালতলার রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ভেতর অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৬ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত ৪১ বস্তা ও ৫০৬ কার্টুন ভর্তি গার্মেন্টস সামগ্রী, নগদ-৮২ হাজার টাকা, মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত দুটি কাভার্ড ভ্যান, একটি প্রাইভেটকার এবং ১০টি মোবাইলসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোরচক্রের ছয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উদ্ধারকৃত গার্মেন্টস মালামাল সমূহ সংশ্লিষ্ট পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম (২৭), মো. জহির (৪০), মো. জনি (২৪), মো. জমির খান (৪০), মো. নুর জামান (৫৮) ও মো. তাবারক হোসেন (৩৯)।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানীর গার্মেন্টস মালামাল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ একটি চোরাকারবারী চক্র। দুর্ধর্ষ চক্রটি পরস্পর যোগসাজোশে বিগত কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ড ভ্যান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় চুরি করে স্থানীয় মার্কেটে চোরাইপথে কমদামে চুরিকৃত মালামাল বিক্রি করে আসছিলো। এতে করে দেশ প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত ও গার্মেন্টস মালিকগণ প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছিলেন। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের কয়েকটি চক্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতি বছর শত কোটি টাকা মূল্যের বেশি পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে।
চুরির কৌশল
তাদের চুরির কৌশল সম্পর্কে র্যাব জানায়, চোরচক্রটি সাধারণত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখিয়ে চুরির মালামাল বিক্রির টাকার অংশ দেওয়ার কথা বলে ড্রাইভারকে রাজি করায়। এরপর নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী নির্জন এলাকার ভেতর কাভার্ড ভ্যান পার্কিং করাতো।
পরবর্তীতে পলাতক মূলহোতা হিমেলের নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত সিরাজুল, মিস্ত্রি জনি, নিরাপত্তারক্ষী জমির ও নুর জামান, সিরাজুলের ড্রাইভার জহির, তবারক এবং পলাতক কেয়ারটেকার শহিদুলসহ অন্যন্য সহযোগীরা মিলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টুন/বস্তার ভেতরে থাকা মালামালের শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ মালামাল নিয়ে পূর্বের ন্যায় কার্টুন/বস্তা সঠিকভাবে বাধাই করে তাদের কাভার্ড ভ্যানে নিয়ে যায়৷ যাতে করে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কেউই সন্দেহ না করতে পারে। এছাড়াও মালামালসহ সম্পূর্ণ ট্রাক/কাভার্ড ভ্যানও মাঝে মাঝে তারা লুট করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন র্যাব।
সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/১৪ আগস্ট ২০২১