সুনামগঞ্জ

লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে বাইচের নৌকায় ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী

সুনামগঞ্জ, ১৪ আগস্ট – লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরেই বাইচের নৌকায় চড়ে ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকালে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের নাইন্দা নদীতে ঘুরে বেড়ান তিনি।

মন্ত্রীর জন্ম সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামে। হাওর পাড়ের গ্রামের কাদামাটিতে বেড়ে ওঠা তার। ২০০৩ সালে যুগ্মসচিবের পদ থেকে অবসরের পর থেকে রাজনীতিতে যুক্ত তিনি।

২০০৯ সালে সুনামগঞ্জ- ৩ (জন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

এম এ মান্নান চাকরি জীবনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চ পদে চাকরি করা ও অবসর জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী হলেও গ্রামকে ভোলেননি। সময় ও সুযোগ পেলেই চলে আসেন নির্বাচনি এলাকা ও নিজের জন্মস্থানে। সুযোগ পেলে বৈঠা হাতে উঠে যান নৌকায়।

ডুংরিয়া গ্রামের পৈত্রিক বাড়ি গত বছর দান করেছেন সরকারকে। তার মায়ের নামে সেখানে স্থাপন করা হচ্ছে আজিজুননেসা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট। এলাকায় এলে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে শান্তিগঞ্জ গ্রামে টিনশেডের বাড়িতে ওঠেন। বাড়ির পাশের নাইন্দা নদীতে নৌকায় চড়ার জন্য একটি ছোট নৌকা তৈরি করেছেন। সময় পেলেই নাইন্দা নদীতে একা একা বৈঠা বেয়ে নৌকায় ঘোরেন।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) নির্বাচনি এলাকার জগন্নাথপুরে দিনভর সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে বিকালে বাড়িতে এসেই লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে বৈঠা হাতে নৌকায় ওঠেন। নিজ বাড়ির পাশে নাইন্দা নদীতে বেশকিছু সময় একা নৌকায় চড়েন।

শুক্রবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ৬০ হাত লম্বা ‘বীর বাংলা’ বাইচের নৌকা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে ভিড় করেন। নৌকা দেখতে এগিয়ে যান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার-উজ-জামান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সখিনা বেগম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদির আহমদসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ‘বীর বাংলা’ নৌকা দেখে উচ্ছ্বসিত মন্ত্রী লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই নৌকার অগ্রভাগে উঠেন। এরপর মন্ত্রীকে নিয়ে কিছু জায়গা প্রদক্ষিণ করে ‘বীর বাংলা’। এ সময় বীর বাংলার বাইচের লোকজন মন্ত্রীকে সারি গান শোনান।

বীরগাঁও গ্রামের ‘বীর বাংলা’ নৌকার মালিক সাদিকুর রহমান (৩০) বলেন, ‘আমাদের নৌকার কথা শুনে মন্ত্রীসাব নৌকাটি দেখার জন্য আমার আব্বাকে বলেছিলেন। তাই আজ সকালে আমরা নৌকা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে গেলাম। মন্ত্রী সাবকে নৌকায় উঠিয়ে আমরা কিছু সময় বাইচ দিয়েছি। নৌকা ও বাইচ দেখে আমাদের বীরগাঁও-পাখিমারা হাওরে নৌকা বাইচের আয়োজন করলে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।’

মন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী হাসনাত হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রী হাওর, নদী ও নৌকার প্রতি দুর্বল। বাড়ির পাশের নাইন্দা নদীতে সময় কাটানোর জন্য তিনি একটি নৌকা তৈরি করেছেন। বাড়িতে এসে সময় পেলেই বৈঠা হাতে একা একাই নৌকায় উঠে পড়েন।’

মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এলাকার মানুষ একটা সুন্দর নৌকা তৈরি করেছেন, আনন্দ-ফুর্তি করতে। তারা নৌকাটি নিয়ে এসেছিল। তাদের অনুরোধে নৌকায় উঠেছি। তারা একটা নৌকা দৌড়ের আয়োজন করতে চায়। বলেছি, ওসি ও ইউএনও-এর সঙ্গে কথা বলে আগামী মাসে আয়োজন করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই নৌকা দেখে আসছি, নৌকার সঙ্গে পরিচয়। হাওর ও নৌকা দেখে বড় হয়েছি। আগে গ্রামের গরিব-ধনী সবারই ঘাটে ছোটবড় নৌকা ছিল। আমার নিজের ছোট একটা ডিঙি নৌকা আছে। নিজে কাঠ কিনে মিস্ত্রি দিয়ে নৌকাটি তৈরি করেছি। এটি হাতে চালানো যায়। আমি নৌকা বাওয়া (চালানো) খুব পছন্দ করি।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
এম ইউ/১৪ আগস্ট ২০২১

Back to top button