জাতীয়

নাসির-অমির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে ডিবি

আতাউর রহমান

ঢাকা, ১৪ আগস্ট – রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের বাসায় মাদকের আসর বসাতেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি। ওই বাসায় নিয়মিতই চলত ইয়াবা ও বিদেশি মদ নিয়ে ‘আমোদ-ফুর্তি’। তদন্ত শেষে এমন তথ্যই পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এক হাজার পিস ইয়াবা ও বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার হওয়া ওই দু’জনকে আসামি করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দিয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিবি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাসির জামিনে রয়েছেন আর অমি কারাগারে।

ঢাকার তুরাগ তীরে অবস্থিত বোট ক্লাবে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় আসেন ব্যবসায়ী নাসির ও অমি। গত ১৪ জুন ওই নায়িকা সাভার থানায় তাদের নাম উল্লেখসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর পরই আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে ডিবি।

মামলার পরদিন ডিবি পুলিশ উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ওই দু’জনকে। তখন সেখান থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা ও বিদেশি মদ উদ্ধার করার কথা জানানো হয়। একই সময় আরও তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে নাসির, অমি এবং ওই তিন নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। মামলাটি ডিবির গুলশান বিভাগ তদন্ত করছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার গতকাল শুক্রবার বলেন, বিমানবন্দর থানার মামলাটির তদন্ত শেষ হওয়ায় তারা আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন।

ডিবির তদন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে নাসির, অমি, লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা নামে পাঁচজন আসামি ছিলেন। তবে তদন্তে মাদকের সঙ্গে ওই নারীদের সম্পৃক্ততা মেলেনি। তাই চার্জশিটে তাদের আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। নাসির ও অমিকে আসামি করা হয়েছে।

ওই সূত্র জানায়, পরীমণির মামলার পর আসামি নাসির ও অমি উত্তরার ওই বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন। এর আগে থেকেই তারা বাসাটি ভাড়া নিয়ে আমোদ-ফুর্তির কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। সেখানে নিয়মিত মাদকের আড্ডা বসানো হতো।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দর থানার ওই মামলাটির চার্জশিট গত ২৭ জুলাই জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিট নম্বর-১৩১। লকডাউনের মধ্যে আদালতের কার্যক্রম সীমিত থাকায় তখন তা হাকিমের কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। শিগগিরই তা জমা দেওয়া হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১ ) এর টেবিল ২৪ (ক), ১০ (ক) এবং ৪১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

পরীমণির মামলাটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়ার ৯ দিন পর ৪ আগস্ট এই নায়িকাও গ্রেপ্তার হন। বনানীর বাসা থেকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকেও মাদক জব্দ করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি পরীমণিকে দুই দফায় ছয় দিন রিমান্ডের পর গতকাল শুক্রবার কারাগারে পাঠিয়েছে।

তদন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, নাসির উদ্দিন মাহমুদ নাসির ইউ মাহমুদ নামেই পরিচিত। চার দশক ধরে আবাসন ব্যবসায় যুক্ত নাসির ঢাকা বোট ক্লাবেরও সদস্য। তিন দফায় উত্তরা ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এ ছাড়া এই ব্যবসায়ী জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি বোট ক্লাবে পরীমণি কাণ্ডে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন।

এদিকে অপর আসামি অমিও ক্লাবপাড়ায় একজন পরিচিত মুখ। আশকোনায় তার মালিকানাধীন ‘সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নারী পাচার করে প্রচুর অর্থ উপার্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কথিত আছে, বিত্তশালী ও তাদের বখে যাওয়া সন্তানদের বিপথে নিতে অমির জুড়ি নেই। তাকে গ্রেপ্তারের পর ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, পরীমণিকে সেই রাতে কৌশলে আশুলিয়ার বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়েছিলেন অমি।

সূত্র : সমকাল
এন এইচ, ১৪ আগস্ট

Back to top button