জাতীয়

এবার খেলাফত মজলিসেও বিএনপি-জোট ছাড়ার আলোচনা শুরু

সালমান তারেক শাকিল

ঢাকা, ১৩ আগস্ট – জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পর এবার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার আলোচনা শুরু হয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে জোরালো হয়ে উঠেছে বিএনপি-জোট ছেড়ে দেওয়ার এই আলোচনা। দলের একটি প্রভাবশালী অংশ জোট ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিলেও শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ। খেলাফত মজলিসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা ও সরকারের একটি সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

খেলাফত মজলিসের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, নানা কারণে দলের অভ্যন্তরে বিএনপি-জোট ছেড়ে দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও এই আলোচনার শুরুটা হয় ২০১৯ সালে মজলিসে শূরার বৈঠকে। ওই বৈঠকে শূরার সিদ্ধান্ত ছিল, জোটগত রাজনীতির কোনও ফলাফল না থাকায় ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন, ‘বর্তমানে ২০ দলীয় জোট কার্যকর নয়। এই জোটের রাজনৈতিক কোনও তৎপরতা নেই। খেলাফত মজলিস এখন জোটগত কোনও রাজনীতি নিয়ে ভাবছে না। খেলাফত মজলিস নিজেদের দলীয় কাজ নিয়ে তৎপর। কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আমরা দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে আমাদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’

দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন নায়েবে আমির বলেন, ‘বিএনপি-জোট ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ২০১৯ সালের শূরার বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত ছিল যে জোটে থেকে রাজনৈতিক কী ধরনের ফলাফল আসছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার, ভাবা দরকার। তবে এ বিষয়ে তখন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।’

আরেক নায়েবে আমির বলেন, ‘জোট ছেড়ে বেরিয়ে এলে ‘রাজনৈতিকভাবে সুবিধা গ্রহণ’ করার বিষয়টিও আলোচনায় আসবে। এদিকটিও নেতৃত্বের ভাবনায় রয়েছে।’

জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে দলীয় ফোরাম ছাড়া কিছু বলা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করাসহ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে গত ১৪ জুলাই বিএনপি-জোট ছেড়ে দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এরপর ১৮ জুলাই থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেন দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা। বর্তমানে জমিয়তের প্রায় নেতাই জামিনে কারাগারে থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।

মজলিসের নেতারা জানান, হেফাজতের মামলায় খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। হেফাজতের মামলায় দলটির উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের এই নেতাই কারাগারে রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে জোট ত্যাগের বিষয়টি সামনে এলে তার মুক্তির বিষয়টিও ত্বরান্বিত হবে, এমন সম্ভাবনার কথা জানান কোনও কোনও নেতা। তবে মজলিসের নেতা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, ‘দলের মহাসচিবের মুক্তির বিষয়টি আইনিভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। দলীয় আইনজীবীরা দেখছেন। প্রয়োজন হলে অন্য আইনজীবী নিয়োগ দেবেন তারা।’

মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী দুই নেতা জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে সরকারের একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় মজলিসের কয়েকজন নেতার। গ্রেফতার, হয়রানি এড়াতে দলের নেতাদের মধ্যে ‘এই যোগাযোগ’ নতুন চিন্তার সঞ্চার করে। বিশেষ করে, বিএনপি-জোট ত্যাগ করা গেলে রাজনৈতিকভাবে ‘স্বাবলম্বী’ হওয়া সম্ভব, এমনটিও মনে করছেন কোনও কোনও নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা বলেন, ‘বিএনপি-জোট নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকা স্বাভাবিক। জমিয়তের মতো খেলাফত মজলিসও যেন জোট ত্যাগ করে, সেটা তারা চায়। তবে, সেটি চাপের কোনও বিষয় নয়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পনা থেকে এই প্রক্রিয়াটি সামনে এসেছে।’

দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, খেলাফত মজলিস সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই জোটগত কোনও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিশেষ করে, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জাতীয় স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে হেফাজত হোক, সমমনা দল হোক, কোনও প্রক্রিয়াতেই যাবে না মজলিস। সেক্ষেত্রে ‘ক্রিস্টাল ডিসিশন’ নেবে দল।’

এ বিষয়ে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকালে মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘জোট কার্যকর না, কিন্তু যখন সক্রিয় হবে তখন জোটের কাজ করবো। আর আমাদের দলের নিয়ম-কানুন আছে। নির্বাহী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হতে হবে। এরপর শূরায় এজেন্ডা হিসেবে পেশ করে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। আমির হিসেবে একাই বলা যায় না, জোটে থাকবো না বা জোট থেকে বেরিয়ে আসবো। তবে দলীয়ভাবে কোনও আলোচনা নাই।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করেছিল বিএনপি। পরে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নতুন ১২টি দলে সংযুক্তির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দলীয় জোটে। এরপর জোটের পরিধি দাঁড়ায় ২০ দলে। তবে ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপি, ন্যাপ ও এনডিপির একাংশ চলে যায়।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এম এউ, ১৩ আগস্ট

Back to top button