জাতীয়

ভারতে থানায় সংসার পেতেছেন বাংলাদেশি মহম্মদ-মাজিদা দম্পতি

ময়ুখ বসু

ঢাকা, ১৩ আগস্ট – ভারতে সাজার মেয়াদ শেষ। কিন্তু দেশে ফেরার প্রয়োজনীয় নথি, কাগজপত্র তৈরি না হওয়ার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না এক বাংলাদেশি দম্পতি। ফলে ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি পুলিশ থানার একটি ঘরেই আপাতত সংসার পেতেছেন তারা।

গত দুই মাস ধরে বাংলাদেশি এই দম্পতির সংসার চালানোর খরচও বহন করছে থানা কর্তৃপক্ষ।

সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই, তাই দুই সন্তানকে দেশে রেখেই ভারতে আসার স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশি দম্পতি মহম্মদ মন্ডল ও মাজিদা মন্ডল। সেইমতো কোম্পানিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দালাল মারফত অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আড়াই বছর আগে বাংলাদেশ থেকে মহারাষ্ট্রের পুণে শহরে এসে পৌঁছয় ওই দম্পতি। কিন্তু ভারতে পৌঁছেই চরম বিপাকে পড়েন তারা। যে দালালের হাত ধরে তারা ভারতে আসেন সেই দালালই ওই বাংলাদেশি দম্পতিকে পুণের বুধওয়ার পেথ নামক একটি নিষিদ্ধপল্লী এলাকায় একটি ঘরে আটকে রাখে বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে বাংলাদেশি নারীকে বেশ্যাবৃত্তির জন্য চাপ দিতে থাকে ওই দালাল। কিন্তু ওই বাংলাদেশি তাতে অসম্মতি জানানোয় একসময় তাদের জেলে পাঠানোরও হুমকি দেয়।

এরই মধ্যে পুরো বিষয়টি জানতে পারে পুণের ফরাসখানা থানার পুলিশ ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে ও পরে আটক করে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইন ও ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে দুই বছরের বেশি সময় কারাগারের মেয়াদও ভোগ করতে হয় ওই দম্পতিকে। কিন্তু নিজেদের দেশে ফেরার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি না হওয়ার কারণে থানা চত্বরেই একটি ঘরে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে থানা কর্তৃপক্ষ। গত প্রায় দুই মাস ধরে সেখানেই অবস্থান করছে ওই বাংলাদেশি দম্পতি।

মাজিদা মন্ডল জানান ‘কোম্পানিতে কাজ পাওয়ার আশায় দেশের বাসায় দুই ছেলেকে রেখে ভারতে চলে আসি। কিন্তু পুণেতে আসার পরই দালাল আমাকে বুধওয়ার পেথ নামক যৌনপল্লীতে পতিতাবৃত্তি পেশায় যোগ দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। কিন্তু আমি যখন তার প্রতিবাদ করি, কাজ করতে অসম্মতি জানাই তখন আমার স্বামীকে গ্রেফতার করিয়ে দেয়। কারণ আমাদের কারো কাছেই বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না। যাইহোক আমি কোনভাবে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে থানায় পৌঁছই এবং গোটা বিষয়টি জানাই। তখন অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগ আমাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।’

মাজিদার স্বামী মহম্মদ মন্ডল জানান, দালালের হাত ধরে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা বাংলাদেশ থেকে পুনের বুধওয়ার পেট এলাকায় এসে পৌঁছয়। এরপর সেখানেই একটি ঘরে তাদের আটকে রাখা হয়। কিন্তু ওই দালাল চেয়েছিল তার স্ত্রীকে পতিতাবৃত্তি পেশায় নামানো কিন্তু তাতে সফল না হওয়ার কারণেই দালাল জেলের হুমকি দেয়। কিন্তু যেভাবেই হোক পুণের পুলিশ গোটা বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আটকে করে।

এরপর আদালতের নির্দেশে প্রায় দুই বছর তিন মাস তাদের পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে (সংশোধনাগার) কাটাতে হয় ওই দম্পতিকে। গত জুন মাসে কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের পুণের ফরসখানা থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে গত দুই মাস ধরে ওই থানাই হয়ে উঠেছে ওই বাংলাদেশি দম্পতির আশ্রয়স্থল। আর কার্যত সেই সময় থেকেই থানা কর্তৃপক্ষের তরফে নিয়মিত বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়ে আসছে ওই বাংলাদেশি দম্পতিকে নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যপারে উদ্যোগ নিতে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে তাদের নথি তৈরি না হওয়ায় এখনও দেশে ফেরত যেতে পারেনি ওই দম্পতি।

এ ব্যাপারে ফরাসখানা থানার ইন্সপেক্টর রাজেন্দ্র ল্যান্ডেজ জানান ‘বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা মহম্মদ মন্ডল ও মাজিদা মন্ডল ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুণে আসেন এবং বুধওয়ার পেথ এলাকায় থাকতেন। আমরা যখন জানতে পারলাম যে কোনরকম বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াই তারা ভারতে আসেন, আমাদের টিম গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইন ও ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরে বিষয়টি আদালতে ওঠায় তাদের দুই বছরের জেল হয়। গত ১৪ জুন তাদের কারাগারের সাজার মেয়াদ শেষ হয় এবং ওই দম্পতিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুণে পুলিশকে নির্দেশ দেয় আদালত।’

জানা গেছে থানার ভিতরেই নিজেদের ঘরে ওই বাংলাদেশি দম্পতি ধর্মীয় রীতিনিতি পালন ও নিয়মিত নামাজও আদায় করছেন। দেশে দুই সন্তানের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলারও ব্যবস্থা করেছে থানা কর্তৃপক্ষ। এমনকি গত মাসে বকরি ইদে ওই দম্পতিকে নতুন পোশাক কিনে দেওয়া হয় ফরসখানা থানার তরফে। থানার পুলিশ কর্মীদের সাথেই ঈদও পালন করেন ওই বাংলাদেশী দম্পতি। এখন কেবল দেশে ফেরার অপেক্ষায় ওই দম্পতি।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এউ, ১৩ আগস্ট

Back to top button