ঢাকা, ১২ আগস্ট – শান্ত নদী, লেক, জলাধার হয়ে উঠতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব। ইতোমধ্যে এশিয়াতে চীন, কোরিয়া এমনকি সিঙ্গাপুর জলাধারের উপর সোলার প্যানেল স্থাপন করে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের নদী আর জলের দেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে। নতুন উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে সম্ভাব্যতা জরিপ করা হলেও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাসমান সোলার প্যানেলের সব চাইতে ভালো দিক হচ্ছে- এতে মাটি নষ্ট হয় না। তাই ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হয় না। একই সঙ্গে প্যানেলগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয় যাতে পানিতে পযাপ্ত সূর্যালোক পড়ে। যার ফলে সেখানে মাছ চাষও করা যায়। অর্থাৎ একই জমি থেকে মাছ এবং বিদ্যুৎ দুটোই পাওয়া যায়।
দেশের উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র এলাকাতে মাটির গুনাগুন ভালো না হওয়াতে সেখানে ফসল উৎপাদন কম হয়। এই অঞ্চলের একটি বড় এলাকাতে এখন ফল বাগানের সঙ্গে হাজার হাজার একর জমিতে পুকুর কেটে মাছের চাষ করা হচ্ছে। এসব পুকুরে শুধু মাছেরই চাষ করা হয়। অথচ মাছের চাষের সঙ্গে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিলে কৃষক এবং সরকার উভয় লাভবান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে, বর্তমানে এক মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনের প্রায় ৩ একর জায়গার দরকার হয়। বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে তাই বড় পরিসরে সোলার পার্ক স্থাপনের মতো পর্যাপ্ত অকৃষি, অনাবাদি ও পতিত জমি পাওয়া কঠিন। এ সমস্যা সমাধানে নদীমাতৃক বাংলাদেশে সবচেয়ে সম্ভবনাময় প্রযুক্তি হলো ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম।
এই পদ্ধতিতে সোলার প্যানেল, ইনভার্টারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ একটি ভাসমান প্লাটফর্মের উপর স্থাপন করা হয়। এতে করে একদিকে যেমন জলাশয়ের বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া কমে জলাশয়ের পানির স্তরের উচ্চতা তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে, অন্যদিকে সোলার প্যানেলের তাপমাত্রা কম থাকার কারণে দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জলাশয় ছায়াবিহীন ও কম ধুলোবালি যুক্ত হওয়ায় সোলার প্যানেলের কর্মক্ষমতাও বেশি থাকে।
বাংলাদেশ ভাসমান সোলার প্ল্যান্ট স্থাপনে কতদূর এগিয়েছে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম ১০ কিলোওয়াট সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করা হয়। দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা মোংলা বন্দর পৌরসভার পানি শোধনাগারের জলাশয়ে এটি স্থাপন করা হয়। এখন এই বিদ্যুৎ দিয়ে পানি শোধনাগারটি চলছে। এর বাইরে আর কোথাও ফ্লোটিং সোলার প্ল্যান্ট নেই।
কোথায় কোথায় এমন সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় জানতে চাইলে স্রেডার একজন কর্মকর্তা বলেন, যেখানেই পানি আছে সেখানেই এমন প্লান্ট বসানো সম্ভব। কিন্তু পানির স্তর সবসময় যেন একই অবস্থায় থাকে- সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
জানা গেছে, দেশের অনেক জায়গাতে এমন স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ থাকলেও এখনই এমন চারটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় দেশের চারটি জলাশয়ে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে।
এরমধ্যে আছে, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক এ সর্বোচ্চ ২৪ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মহামায়া লেকে ৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, ঝিনাইদহের জয়দিয়া লেকে ৯ মেগাওয়াট, যশোরের বুকভরাতে ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করা সম্ভব। এছাড়া বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির দুইটি পরিত্যাক্ত পিট লেকে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিরুপনের কাজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সর্বোচ্চ ৪০ মেগাওয়াট ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করা যাবে।
এতসব বিবেচনায়, জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীর দেশে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রর উপর জোর দেয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
এম ইউ/১২ আগস্ট ২০২১