ইসলাম

মহররম মাসের বৈশিষ্ট্য ও আমল

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। মহররম আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাবান মাস।

মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত বা নিষিদ্ধ। এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের মাস। প্রিয় নবী (সা.) মহররমকে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি—যেদিন থেকে তিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা (এই মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে) নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)

আবু জার (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাতের কোন অংশ উত্তম এবং কোন মাস উত্তম? তিনি বলেন, রাতের মধ্যে উত্তম হলো গভীর রাত, আর মাসগুলোর মধ্যে উত্তম হলো আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মহররম বলে থাকো। (নাসাঈ, হাদিস : ৪৬১২)

ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে কোনটি উত্তম—তা নিয়ে ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত দিয়েছেন। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, এই মাসগুলোর মধ্যে উত্তম হলো মহররম। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা সম্মানিত মাস দিয়ে বছর শুরু করেছেন এবং সম্মানিত মাস দিয়ে শেষও করেছেন। রমজানের পর উত্তম মাস হলো মহররম। (লাতায়েফুল মাআরিফ : পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮)

ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, এ মাসের বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে ইবাদত করলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তাওফিক লাভ করা যায়। (আহকামুল কোরআন)

ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, রমজান মাস বেশি ফজিলতপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মহররম মাসকে আল্লাহর মাস বলে সম্বোধন করার কারণ হলো, চন্দ্রমাসগুলোর মধ্যে একমাত্র মহররম মাসকে ইসলাম আগমনের পর নামকরণ করা হয়েছে। অন্য মাস জাহেলি যুগের নামের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (শরহে মুসলিম, ইমাম সুয়ুতি, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫১)

মহররম মাসের আমল : মহররম মাস নফল রোজা ও ইবাদত-বন্দেগির মাস। এই মাসে রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত আছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা। আর ফরজ সালাতের পর উত্তম সালাত হলো গভীর রাতের সালাত।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৪৫)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি একবার রাসুল (সা. )-এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা রমজানের পর সবচেয়ে বেশি রোজা রাখব কোন মাসে? তিনি বলেন, তোমরা যদি রমজানের পর কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররম মাসে রাখো। কেননা এটি আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহ আগের এক জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং পরবর্তীদের তাওবাও কবুল করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৪০; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৪২)

সুতরাং মহররম মাসের ফজিলত বিবেচনা করে এই মাসে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা, দরুদ পাঠ ইত্যাদি বেশি বেশি করা উচিত। কিন্তু মহররম মাসকে কেন্দ্র করে তাজিয়া মিছিল বের করা, কান্নাকাটি করা, মাতম-মর্সিয়া করা, শরীরের রক্ত বের করা, আতশবাজি ইত্যাদি ইসলামসম্মত নয়।

এম এউ, ১০ আগস্ট

Back to top button