এশিয়া

আজ হিরোশিমা বোমা হামলার ৭৬তম বার্ষিকী

টোকিও, ০৬ আগস্ট – সেদিন সকালে জাপানের হিরোশিমা শহরের রাস্তায় খেলা করছিল শিশুরা। রান্নাঘরে মায়েরা তৈরি করছিলেন নাস্তা। প্রাণ চাঞ্চল্য ছিল নগরী জুড়ে। কে জানতো কিছুক্ষণ পরই শ্মশান পরিণত হবে পুরো নগর! কে জানতো আণবিক বোমার ভয়াবহ বিভিষিকা দেখবে বিশ্ব!

সেদিন সকাল ৮টার পর হিরোশিমার আকাশে উড়তে মার্কিন বোমারু বিমান। ৮টা বেজে ১৫ মিনিটে একটি বোমা নিক্ষিপ্ত হয় হিরোশিমায়। তারপর যা হলো তা পৃথিবীর মানুষ কখনোই কল্পনা করেনি।

মুহুর্তের মধ্যে লেলিহান আগুনে ঝলসে গেলো পুরো শহর। মানুষের শরীর থেকে মাংস খসে পড়তে থাকলো। পুড়ে ছাই হয়ে গেলো সব। তাৎক্ষণিকভাবে মারা গেলেন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ। পরে বোমার তেজস্ক্রিয়তায় নারী, শিশুসহ নির্বিচারে আরও বহু প্রাণ ঝরে গেলো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে ৬ আগস্ট হিরোশিমায় এ বোমা হামলার তিনদিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে আরও একটি আণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ নিহত হন।

ম্যানহাটানে তৈরি এ বোমার নাম ছিল ‘দ্য লিটল বয়’, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘ছোট্ট বালক’। নাগাসাকিতে যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল, সেটি ছিল ‘দ্য ফ্যাট ম্যান’ (মোটা লোক)।

১৯৩৯ সালে ম্যানহাটানে এ বোমা তৈরির কার্যক্রম শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। যে একদল বিজ্ঞানী এ বোমাগুলো তৈরি করেছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ইউরোপের জার্মানিতে নাৎসী নির্যাতনে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

‘ছোট্ট বালকে’র আঘাতের ভয়াবহতায় সেদিন হিরোশিমায় যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এ বোমায় মারা যান তখনকার জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৯ শতাংশ। পরবর্তীতে আণবিক তেজস্ক্রিয়ার প্রভাবে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছিল জাপানে। বোমা বিস্ফোরণের পর হাজার হাজার মানুষ মারা যান এর তেজস্ক্রিয়তায়। ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্বসহ নানা রোগের বিস্তার বেড়েছিল দেশটিতে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপের ছয়দিন পর এক রেডিও বার্তায় জাপানের সম্রাট হিরোহিতো আত্মসমর্পনের ঘোষণা দেন।

আজ হিরোশিমার বোমা হামলার ৭৬তম বার্ষিকী। মানুষের পৃথিবীতে এমন বিধ্বংসী বোমা আর কখনো না ফাটুক – এমনটাই প্রত্যাশা থাকবে সবার।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০৬ আগস্ট ২০২১

Back to top button