সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণে বিশ্বে শীর্ষ দশে বাংলাদেশের নদী
সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে দায়ী দেশগুলোর তালিকায় নবম স্থানে আছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত এপ্রিলে সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশ দেশের নয়টিই এশিয়ার। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডের সাত গবেষকের করা এই গবেষণা বলছে, সমুদ্রের প্রায় ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য আসে পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি নদী থেকে। যার একটি বড় অংশ আসছে এশিয়ার নদীগুলো থেকে। এর আগে ২০১৭ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলেছিল, পৃথিবীর ২০টি বড় নদী, যার অধিকাংশই এশিয়ায় সমুদ্রের ৬৭ শতাংশ প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী।
সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, বড় নদী নয় বরং ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকা দিয়ে যেসব ছোট নদী বয়ে গেছে, সেগুলোই মূলত প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে যায় বড় নদীতে এবং পরে তা সমুদ্রে পড়ে। গবেষকদের হিসাবে, নদীগুলো বছরে কমপক্ষে আট লাখ টন থেকে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়।
নেচারের গবেষণায় বলা হয়েছিল, বছরে নদী থেকে সমুদ্রে যাওয়া বর্জ্যরে পরিমাণ সাড়ে ১১ লাখ থেকে ২৪ লাখ টনের বেশি। নতুন গবেষণাটিতে মোট ১ হাজার ৬৫৬টি নদীর তথ্য নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এখানে নদীর বেসিনগুলোর নানা তথ্য, নদীর ব্যবহার সব কিছুকেই গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে। যেমন সমুদ্রতীর থেকে নদীগুলোর দূরত্ব, বৃষ্টিপাতের প্রভাব, বাতাসের গতিবেগ, ভূমির ঢাল ও বিস্তৃতি এবং এগুলো প্লাস্টিক পরিবহনে কেমন প্রভাব ফেলে ইত্যাদি।
নতুন গবেষণা অনুযায়ী সাগরদূষণে দায়ী দেশগুলোর যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে শীর্ষ দশে ব্রাজিল ছাড়া বাকি সব দেশ এশিয়ার। শীর্ষ ৫০টি নদীর মধ্যে এশিয়ার আছে ৪৪টি। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার জনবহুল এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পাসিগ নদী দূষণের তালিকায় সবার ওপরে। এই নদী বছরে প্রায় ৬৯ হাজার টন প্লাস্টিক বহন করে সাগরে নিয়ে যাচ্ছে। দেশটি বছরে মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে। তালিকায় দ্বিতীয় ভারত ও তৃতীয় অবস্থানে আছে চীন। ভারতের নদীগুলো বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার টন বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়। চীন তৈরি করে প্রায় ৭১ হাজার টন।
তালিকায় ৯ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের নদীগুলো বছরে প্রায় ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলী ও রূপসা নদী থেকে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য যায় বঙ্গোপসাগরে। পদ্মা দিয়ে বছরে প্রায় সাত হাজার টন, কর্ণফুলী দিয়ে প্রায় তিন হাজার টন এবং রূপসা দিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
শীর্ষ দশে এসব দেশ ছাড়াও নাম আছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের। শুধু এই দেশগুলোই বছরে প্রায় ৫ লাখ ৮০ হাজার টন বর্জ্য ফেলে সমুদ্রে। আশার কথা হলো, সমুদ্র পরিষ্কার করার জন্য এখন পৃথিবীতে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। তারা প্রচুর অর্থও সেখানে ব্যয় করছে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, শুধু পরিষ্কার করাই সমাধান হতে পারে না। জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো দিয়ে যেসব নদী বয়ে গেছে, সেসব এলাকায় পানিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যেন না ফেলা হয় তেমন উদ্যোগ নিতে হবে।
এম এউ, ০৫ আগস্ট