জাতীয়

করোনা রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো

ঢাকা, ০৫ আগস্ট – প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলছে। আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ ছুটছেন হাসপাতালে। এসব করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভিড় সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালে ছিল পজিটিভ রোগীর ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

অনেক হাসপাতালে নেই খালি শয্যা। এই অবস্থায় আইসিইউ সংকট কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। আপাতত অক্সিজেন মজুদ থাকলেও প্রতিদিন যেভাবে প্রয়োজন বাড়ছে তাতে যেকোনো সময় সংকটের আশঙ্কা না করে পারা যাচ্ছে না।

আগামীতে যদি রোগীর ভিড় আরও বেড়ে যায় তখন কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি নেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।

পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই সামনে একদিকে বিদ্যমান হাসপাতালগুলোকে আরো সম্প্রসারণ, সাধারণ শয্যা বাড়ানো, আইসিইউ বাড়ানো, অক্সিজেন সুবিধা বাড়ানো, আইসোলেশন সেন্টার বাড়ানোসহ নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

প্রয়োজনে রোগীদের জন্য আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, এখন যেভাবে অনেক আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে হাসপাতালের বাইরে অস্থায়ী হাসপাতালে জটিল রোগীদের সেবা দেওয়া অনেকটাই দুরূহ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই এমন কোথাও হাসপাতাল বানালে তা খুব একটা কাজে আসবে না বলেও মত দিচ্ছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এমনটাই মনে করছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গত রোববার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে সামনে রোগী সামাল দেওয়ার আর ক্ষমতা থাকবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সংক্রমণ না কমানো গেলে হাসপাতাল বাড়িয়েও কুলানো যাবে না।

গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে হাসপাতালে না কুলানো গেলে আবাসিক হোটেলে প্রাথমিক রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছাড়া গতি থাকবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘যেকোনো স্থাপনায় বা অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিন করা গেলেও জরুরি রোগীদের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এখন যারা হাসপাতালে আসছে তারা মূলত শ্বাসকষ্ট নিয়েই আসছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বল্প মাত্রার অক্সিজেনে কাজ হচ্ছে না। এ জন্য আমরা এখন বেশি নজর দিচ্ছি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম শক্তিশালী করার জন্য। এরই মধ্যে ঢাকায় ৪টি হাসপাতালে নতুন অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আরও দুটিতে কাজ চলছে।

পাশাপাশি তিনটি হাসপাতালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষম অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপন হয়েছে। আরো কয়েকটিতে কাজ চলছে। যদিও এগুলো করতে কিছুটা সময় লাগবে। কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে আরও প্রক্রিয়াধীন আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত দেশে শনাক্তকৃত করোনা রোগী ১৩ লাখ ৯ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২১ হাজার ৬৩৮ জন ও সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৪১ হাজার ১৫৭ জন।

এখন রোগী আছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৫ জন। আর হাসপাতালগুলো মোট শয্যা আছে ১৮ হাজার ৬৮৮টি। এর মধ্যে সাধারণ শয্যা ১৬ হাজার ৪৭৮, আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ৩২৬ ও এইচডিইউ শয্যা ৮৮৪টি।

এর মধ্যে গতকাল খালি ছিল সাধারণ শয্যা ৪ হাজার ৯২৯টি এবং রোগী ছিল ১১ হাজার ৫৪৯ টিতে। আইসিইউর ১ হাজার ১৫৭ শয্যায় রোগী ছিল, খালি ছিল ১৬৯টি। এইচডিইউর ৭৩১ শয্যায় রোগী ছিল, আর খালি ছিল ১৩১টি শয্যা।

সব মিলিয়ে খালি শয্যা ছিল ৫২৫১টি। এর মধ্যে ঢাকায় সরকারি ১৭টি হাসপাতালে ৩ হাজার ৯শ’ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ৮৯০টি। আইসিইউর ৩৮৫ শয্যার মধ্যে মাত্র ২৪টি ও এইচডিইউর ৪৩২ শয্যার মধ্যে মাত্র ৩৪টি খালি ছিল।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ০৫ আগস্ট

Back to top button