অপরাধ

‘জিনের বাদশাহ’ পরিচয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ঢাকা, ০৪ আগস্ট – একটি চক্র অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ কেবল নেটওয়ার্কের লোকাল চ্যানেলে ‘জিনের বাদশা’র বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্তদের সুস্থ করা, বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা, দাম্পত্য কলহ দূর, বিয়ের বাধা দূর, অবাধ্যকে বাধ্য করা, চাকরিতে পদোন্নতি, কম দামে স্বর্ণ কেনার কথা বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে গত দুই বছরে অন্তত অর্ধ কোটি টাকার প্রতারণা করে তারা।

এসব অভিযোগে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. আল আমিন, মো. রাসেল ও মো. সোহাগ।

বুধবার ভোরে ভোলা জেলা ও রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, চট্টগ্রামের এক নারীর স্বামী বিদেশ থাকেন। তার দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল। এ রোগ থেকে মুক্তির আশায় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখে ‘জিনের বাদশা’কে ফোন করলে ওই নারীকে বলা হয়, তার সমস্যার সমাধান করা হবে। জিনের বাদশা নামধারী চক্রটি ওই নারীকে ফাঁদে আনার জন্য প্রথমে ৯৯৯ টাকা নেয়। এ টাকা গরিব মানুষদের খাওয়ানো হবে বলে জানানো হয়।

এরপর ধাপে ধাপে ‘জিনের বাদশা’র সঙ্গে কথা বলে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় প্রায় ২২ লাখ টাকা খোয়ান ওই নারী। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করত চক্রটি। ফলে ওই নারী চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ছয় মাসে চক্রটি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে একই ভাবে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায় সিআইডি।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।

তিনি বলেন, জিনের বাদশা পরিচয়দানকারী মো. আল আমিন বিজ্ঞাপন দেখে কেউ সমস্যা সমাধানের জন্য যোগাযোগ করলে মেয়েদের কণ্ঠে কথা বলে তাদের ফাঁদে পেলে এবং পরে তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। জয়যাত্রা টিভিসহ বিভিন্ন অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে এসব বিজ্ঞাপন দেয়া হতো। বিজ্ঞাপনে একটা মোবাইল নম্বর দেয়া হতো। সেই নম্বরে ফোন দিলে একজন ফোন রিসিভ করে ফোনদাতার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিতেন। পরে ওই ফোনদাতাকে বলা হতো তারা যেভাবে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে গরিব মানুষকে একবেলা খাবার দিতে হবে। ৯৯৯ টাকা বা ১১১১ টাকা পাঠাতে হবে। টাকা পাঠানোর পর জিনের বাদশার নম্বর দিলে রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ফোন করলে জিনের বাদশা কথা বলবেন। টাকা দেয়ার পরের ধাপে ওই নম্বরে ফোন দিলে একজন পুরুষ ফোনটি রিসিভ করেন। সালাম বিনিময়ের পর পরিবারের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেন। জিন-পরির যে মা আছেন তার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন। পরে সাধনা করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

মুক্তা ধর আরও বলেন, ছয় মাসেই ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের জব্দ করা ব্যাংক হিসাবে ১২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এখানে আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছে থেকে যে তথ্য পেয়েছি সেটা অর্ধকোটি টাকা। তাদের কাছ থেকে তদন্ত করলে এর পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খায়রুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : দেশ রূপান্তর
এন এ/ ০৪ আগস্ট

Back to top button