অপরাধ

মাদক পাচার: নিত্য নতুন অভিনব কৌশল

মো.ফরহাদ উজজামান

ঢাকা, ০৪ আগস্ট – মাদক বিরোধী অভিযান ও মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের পরও মাদক পাচার থামছে না। বরং মাদক পাচারে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। অনেক সময় পাচারকারীদের নিত্য নতুন ও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল দেখে হতবাক হয়ে পড়েন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও।

পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সবজির ভেতরে, পরিবহনের মধ্যে বিশেষ চেম্বার তৈরি, শুকনো মরিচ, জুতা, ইলিশ মাছ, কচ্ছপ ও নারীদের অন্তর্বাসসহ নানা কায়দায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করেন মাদক ব্যবসায়ীরা।

ডিবি সূত্র জানায়, সম্প্রতি মাদকসহ একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। জব্দকৃত কাভার্ড ভ্যানের ভেতরে দেখা যায়, অভিনব কৌশলে একটি গোপন কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। যা গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে বিশেষ একটি ইলেকট্রিক সুইচের মাধ্যমে অটোমেটিক হাইড্রোলিক দরজা খোলা ও বন্ধ করা যেত। মাদক পরিবহনের জন্য এই কক্ষটি ব্যবহার হতো।

সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো এলএসডি মাদকের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা আনা হয়েছিল কানাডা থেকে। গত ২৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আটক করা হয় এ মাদকের দ্বিতীয় চালান।

জানা যায়, টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করে কুরিয়ারের মাধ্যমে আসে এ মাদকের চালান। এছাড়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বিদেশে থেকে ফেরার সময় আনেন এ মাদক। মাইক্রোগ্রামেই (১ গ্রামের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ) নেশা হওয়া এ মাদককে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী মাদক বলা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নতুন মাদকের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুকে তাদের বিভিন্ন গ্রুপও রয়েছে। মাদক পাচারকারী ও সেবনকারী দুজনেই নতুন কৌশল অবলম্বন করে পাচার ও সেবনের ক্ষেত্রে। তবে আমরা সবসময় মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য অবস্থানকালেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব নতুন মাদকে। কেউ থাইল্যান্ডে গিয়ে কেউ আবার লন্ডনে গিয়ে এলএসডি সেবনে আসক্ত হচ্ছে। পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরলেও আসক্তি থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে আমদানি করছে এলএসডি ও ডিএমটি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সব অপরাধের মূলেই রয়েছে মাদক। যেখানে মাদক সেখানেই অবৈধ অস্ত্র, চোরাচালান, নারী পাচার, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ ঘটবে। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না। তথাপি প্রতিনিয়ত নতুন মাদক আমাদের তরুণ সমাজের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। এসব ব্যবসায়ী ও গতিপথ শনাক্ত করতে গোয়েন্দা ও সাইবার নজরদারি অব্যাহত আছে।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্তরা একটা মাদক নিয়ে বসে থাকে না। একটা গ্রহণ করার পর তারা নতুন কিছুর চিন্তা করে। মাদকসেবীরাও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকে। মেয়েদের মধ্যেও এ প্রবণতা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে। এগুলোর বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে। শুরুতেই উপড়ে ফেলতে হবে শেকড়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু অভিযান পরিচালনা করে কারবার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। মাদকের চাহিদা কমাতে পরিবার থেকে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০৪ আগস্ট ২০২১

Back to top button