অপরাধ

দর্জি মনির মন্ত্রী-এমপিদের জাল বাণীও দিতেন

ইউসুফ সোহেল

ঢাকা, ০৪ আগস্ট – মনির খান ওরফে দর্জি মনির। নিপুণ হাতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া কাজে লাগিয়েছেন পরতে পরতে। তবে তা কোনো ভালো কাজে নয়, স্রেফ প্রতারণা। ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ হিসেবে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন। হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মনিরের ফেসবুক ঘাঁটলেই নজরে পড়বে প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে তার ওঠাবসার ছবি! কোনো ছবিতে একান্তে কথা বলছেন সরকারের সিনিয়র কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে, কোনোটাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছাকাছি বসে আছেন। কিন্তু সবই ভুয়া। প্রতিটি ছবিই তার নিপুণ হাতে ফটোশপের কারসাজিতে করা; যা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই।

প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত এই দর্জি মনির বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ছবি তুলেই ক্ষান্ত দেননি। বিশেষ বিশেষ দিনে নিজেই মন্ত্রী-এমপিদের বাণী লিখে তাতে জাল স্বাক্ষর দিয়ে প্রচার করে বেড়াতেন। জমির দালালি থেকে তদবির বাণিজ্য- কী করেননি এই প্রতারক। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক উপকমিটির কথিত সদস্য মনির খান ওরফে দর্জি মনিরকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে গত রবিবার রাতে তাকে আটক করা হয় বলে মনিরের স্বজনরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল মনিরকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে কী অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে তা তারা জানেন না। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি দেওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই আলোচনায় এলেন দর্জি মনির। তার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে

গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মনির খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পুলিশ সূত্র ও মনির খানের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, ১০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে তার। প্রোফাইল ছবিতে মুজিব কোট ও চাদর পরা একটি ছবি রেখেছেন মনির। বুকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং সেই নৌকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সংবলিত একটি ব্যাচ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গেও ছবি শেয়ার করেছেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গেও তার ওঠা-বসার ছবি দেখা যায় ফেসবুকে।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, অসদুদ্দেশ্যে এডিট করে এসব ছবি ব্যবহার করতেন দর্জি মনির। জমির দালালি ও তদবির বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। ভুঁইফোঁড় সংগঠন খুলে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সদস্য সংগ্রহের নামে অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন এ ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতি করে এলেও তিনি ‘দর্জি মনির’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। ফটোশপ কারসাজিতে এমন পারদর্শী আগে কখনো দেখেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে শেয়ার করতেন মনির।

ফেসবুক আইডিতে মনির খানের পরিচয় অংশে লেখা আছে, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে সহসম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এর মধ্যে রয়েছে বাংলার রূপসী গার্মেন্ট লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ‘বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টাও মনির। ফেসবুকের কাভার ফটোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একটি ছবি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। তবে ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায়, খুব সূক্ষ্মভাবে সম্পাদনার মধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবির জায়গায় নিজের ছবি বসিয়ে সেগুলো প্রচার করছেন মনির খান। তিনি ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি খুলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকেও টাকার বিনিময়ে পদ দিয়েছেন। প্রতারণার মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া মনির কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতেও জোর চেষ্টায় ছিলেন।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এইচ, ০৪ আগস্ট

Back to top button