জাতীয়

বিশ্বের ৩০ প্রভাবশালী প্রতিবন্ধী নেতার একজন বাংলাদেশের ভাস্কর

ঢাকা, ০৩ আগস্ট – ভাস্কর ভট্টাচার্য। যিনি কাজ করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট (অ্যাকসেসেবিলিটি) এবং চট্টগ্রামের ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে। তিনি এবার নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বের প্রভাবশালী প্রতিবন্ধী নেতাদের একজন হিসেবে।

গত ২৬ জুলাই অনলাইন আয়োজনের মাধ্যমে ‘ডি-৩০ ডিজঅ্যাবিলিটি লিস্ট-২০২১’ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধীবিষয়ক আইনের (এডিএ) ৩১ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নেপাল, কেনিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিবন্ধী নেতাদের সঙ্গে ভাস্কর ভট্টাচার্য এ সম্মাননা পেয়েছেন। এ সম্মাননার ফলে এই ৩০ জন নেতা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ফোরামে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ে কথা বলবেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আইন-নীতিতে পরিবর্তন আনবেন বিশ্বনেতারা।

প্রতিবন্ধী হিসেবে বিশ্ব নেতাদের কাতারে নাম লেখানোর পর ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, এ সম্মাননা পেতে আমাকে আবেদন বা কিছুই করতে হয়নি। আমার বিভিন্ন কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এটি কাজের ক্ষেত্রে বিশাল একটি স্বীকৃতি। সবচেয়ে বড় কথা, আমার নামের পাশে বাংলাদেশ লেখা থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করবে। নির্বাচিত ৩০ জন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে কথা বলার সুযোগ পাবেন।

ভাস্কর ভট্টাচার্য চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের বাগদণ্ডী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের দুই বছর পর মা-বাবা বুঝতে পারেন তাদের ছেলে অন্ধ। চোখে দেখতে পান না বলে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা নিয়ে আক্ষেপ ছিল ভাস্কর ভট্টাচার্যের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। ব্রেইলে লেখা বই না থাকাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয় ভাস্করকে।

অনার্স পাস করার পর ২০০২ সালে ভাস্কর জাপানে ডাসকিন লিডারশিপ ট্রেনিং করার সুযোগ পান। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ১০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল এক বছরের এ প্রশিক্ষণে। এ ট্রেনিং প্রোগ্রামেই কম্পিউটারে ভাস্করের প্রথম হাতেখড়ি হয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর এই প্রশিক্ষণে জীবনের মোড় ঘুরে যায় ভাস্করের। দেশে ফিরে মাস্টার্স করেন তিনি।

পড়াশোনা শেষ করে প্রথম এক বছর কোথাও চাকরি পাননি ভাস্কর। শেষে ভাস্করই চট্টগ্রামে প্রথম কম্পিউটারাইজড ব্রেইল প্রোডাকশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে ‘জাপান ব্রেইল লাইব্রেরি’ এবং ‘মালয়েশিয়ান কাউন্সিল ফর দ্য ব্লাইন্ড’। এসব কাজের মধ্য দিয়েই চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংস্থা ইপসাতে চাকরি পাওয়া সহজ হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে ভাস্কর দুই মেয়ের জনক। তার স্ত্রী শ্যামশ্রী দাশ ইপসাতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।

সূত্র : আরটিভি
এন এইচ, ০৩ আগস্ট

Back to top button