জাতীয়

করোনা ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে সরকারের পদত্যাগ চায় বিএনপি

ঢাকা, ০১ আগস্ট – করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি। গত শনিবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ কথা বলা হয় বলে জানান ফখরুল। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হঠাৎ রপ্তানীমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা আরো মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন। একদিকে গণপরিবহণ বন্ধ, অন্যদিকে কারখানায় কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশে তারা হতবিহ্বল হয়ে উঠেছে এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

‘প্রায় সব বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের এই শ্রমিকরা এবং ঢাকার জনগণ ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ভয়াবহ সংক্রমণের শিকার হবার সম্ভাবনা বাড়ছে। অযোগ্যতা, দুর্নীতি পরায়নতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এই সব আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায় দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।,

মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকায় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপে চরম অব্যবস্থপনা দেখা দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার উদ্দেশ্য মূলকভাবে সংক্রমণের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যার প্রকৃত অবস্থার চিত্র না দিয়ে জনগণকে প্রতারণা করবার জন্য অসত্য তথ্য দিচ্ছে। হাসপাতালে সংবাদ কর্মীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা নিষেধ আরোপ করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট মামলার ভয়ে সংবাদ কর্মীগণ প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারছেন না।

করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সংক্রমণের হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণ করে যে, ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সারাদেশে ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ পরীক্ষার জন্য জেলা হাসপাতাল ও পরীক্ষা কেন্দ্র গুলোতে ভীড় করছে। কিন্তু সরকারের নীতি ও অব্যপস্থাপনার কারণে বেশির ভাগ আক্রান্ত মানুষ টেস্ট করতে পারছে না। শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না।

করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কোন বেড পাচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোগীরা অক্সিজেন পাচ্ছে না। করোনা সংক্রান্ত জটিল রোগী ও শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ অক্সিজেন আইসিইউ বেড পাচ্ছে না। ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে করোনা সংক্রমিত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মৃত্যু বরণ করছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি উন্নত করবার কোনও প্রচেষ্টা সরকারের নেই। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। অবিলম্বে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

ফখরুল বলেন, সকল নাগরিককে টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাক টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ সরকার এখন পর্যন্ত জনগণের সামনে দিতে পারেনি। সরকার অবলীলায় জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করছে। একদিকে সরকার বলছে, প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। অথচ গত ৭ মাসেও ৬০ লাখ টিকা দিতে পারেনি। টিকা প্রাপ্তির কোনও নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়।

‘প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা প্রদানের জন্য টিকা প্রাপ্তির উৎস সরকার এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর এই সব উক্তি এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে। এগুলো যে ফাঁকা বুলি এটা বুঝতে আর জনগণের কোন বাকি নেই। ফাঁকা বুলি না আওরিয়ে অবিলম্বে আবারও টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ০১ আগস্ট

Back to top button