ডায়াবেটিসকে ডায়াবেটিস মেলাইটাস ও বলা হয়। যা খুবই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডায়াবেটিস দুই ধরণের হয়- টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়না। অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয়না অথবা উৎপন্ন হলেও সঠিকভাবে কাজ করেনা। ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকারের বিষয়ে জানবো এই ফিচারে।
ডায়াবেটিসের কিছু লক্ষণ হচ্ছে- ক্লান্ত অনুভব করা, ওজন কমে যাওয়া, অনেক বেশি তৃষ্ণা পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, কাটা স্থান বা ক্ষত শুকাতে সময় লাগা এবং ঝাপসা দৃষ্টি।
ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে আপনাকে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিসের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো হচ্ছে –
১। করল্লা
করল্লা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে করল্লা। দুই বা তিনটি করল্লার বীচিগুলো ফেলে দিয়ে রস বের করে নিন। করল্লার রসের সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন।
২। দারুচিনি
যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য দারুচিনি খুবই উপকারী। এটি অগ্নাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তের সুগার লেভেল কমায়। দারুচিনির গুঁড়া চা বা পানি বা অন্য পানীয়ের সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
৩। অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক শক্তিশালী উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী। হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন।
৪। আম পাতা
৩-৪ টি আম পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এই মিশ্রণটি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। আম পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখতে পারেন। দিনে দুই বার আধা চামচ করে এই আম পাতার গুঁড়া খেতে পারেন।
৫। মেথি
ডায়াবেটিসের সবচেয়ে ভালো একটি প্রতিকার হচ্ছে মেথি। ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালে মেথি বীজ সহ পানিটুকু পান করুন। মেথি বীজের জৈব উপাদান ইনসুলিনকে উদ্দীপিত করে। এছাড়াও এতে উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকে বলে স্টার্চকে গ্লুকোজে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সাহায্য করে।
এছাড়াও জাম, কারিপাতা, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, আমলকী, পেয়ারা, ঢেঁড়স, নিম ইত্যাদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
টিপস :
১। প্রতিদিন সকালে সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ হাঁটলে শরীরে ভিটামিন ডি এর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
২। সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন। পানি চিনিকে ভাংতে সাহায্য করে।
৩। দম চর্চা করে, গান শুনে বা শখের কাজ করে স্ট্রেস মুক্ত থাকুন। কারণ স্ট্রেস ব্লাড সুগার বৃদ্ধি করে।
৪। আঁশযুক্ত খাবার খান।
৫। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
৬। নিয়মিত ব্লাড সুগার লেভেল মাপুন।
৭। ডায়াবেটিসের রোগীদের স্ট্রেস ও উদ্বিগ্নতা কমানোর জন্য নিয়মিত ৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। স্ট্রেস ও উদ্বিগ্নতা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক কারণ।
আর/১২:১৪/১০ আগষ্ট