ঢাকা, ২৮ জুন- যত্নে লালিত চুল, ভালো চেহারা, ঢঙ, দু’ চোখ ভরা স্বপ্ন- সবই ছিলো তার। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে চেষ্টাও কম করেননি। কিন্তু লাভ হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত অভিমানে ঘর ছাড়েন বাবু।
ঘর, বাড়ি, পরিবার, স্বজন সবই ছেড়ে ছিলেন। কেবল স্বপ্নটা ছাড়েননি। তাই খুলনা ছেড়ে সোজা চলে আসেন স্বপ্নের কারখানা রাজধানী ঢাকায়।
একটু সুযোগ পেলে ঠিকই জায়গা করে নেবেন বড় পর্দায়। এসব কথা এখন অতীত।
সব স্বপ্নকে বিদায় জানিয়ে বাবুর নিথর মরদেহ চলেছে সেই আদি গন্তব্যে, খুলনার পথে।
মৃত্যু সনদ থেকে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ২২০ নম্বর ওয়ার্ডে সার্জারি ইউনিট-৪ এ গত মঙ্গলবার (২১ জুন) নূরজাহান নামে কেউ একজন তাকে ভর্তি করেন। ঠিকানা বড়গ্রাম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
বাবুর তত্ত্বাবধায়ন করেন ইন্টার্ন ডাক্তার রাশিদা আক্তার হেনা ও নিশাত প্রীতি।
চিকিৎসার স্বার্থে তাকে প্রশ্ন করে জানা যায়, বাবু কখনও সিগারেট খাননি, মদ খাননি। সেই সঙ্গে তার ঢাকায় চলে আসার গল্প।
রোববার (২৬ জুন) দুপুর পৌনে ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাবু। মৃত্যু আগের এটুকু বলতে পারেন, তার বাড়ি খুলনা জেলার জোড়া গেট সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে। বাবু একমাত্র ভাই, আরও রয়েছে চার বোন। তারা খুলনায় বসবাস করলেও, তাদের জন্ম চট্টগ্রাম জেলায়।
বাবু জানান, ১৫ বছর আগে যখন তিনি অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন তখন তার বড় বোন রেবেকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিফোন অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এরপর নিশাত প্রীতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে যোগাযোগ করেন রেবেকার সঙ্গে। রেবেকা খানম বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিফোন অপারেটর বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা।
‘বিশ্বাস করতাম একদিন ভাইকে ফিরে পাবো। কিন্তু শেষবার কথা বলতে পারবো না- বুঝতে পারিনি’ –বলেন রেবেকা।
আমার আদরের ভাই তৈয়েবুর রহমান বাবু। অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পরে বাবা (আব্দুল রহমান মল্লিক) অনেক খুঁজেছেন, কোথাও পাননি। ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখার অপূর্ণ ইচ্ছা নিয়েই ২০০৮ সালে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। মা (আলেয়া বেগম) চলে গেছেন আরও আগে, ১৯৯৯ সালে।
সোমবার (২৭ জুন) মৃত্যুর খবর খুলনায় পৌঁছালে রাতেই তাদের আত্মীয়ইসহাক মিয়া ঢামেক হাসপাতালের মরচুয়ারিতে এসে মরদেহ শনাক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে নিশাত প্রীতি বলেন, বাবুর পিঠে এবং পেটে বড় ঘা ছিলো। তিনি খেতে পারতেন না। তার কথায় সব সময় অভিমানের ছাপ পাওয়া যেতো। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচাতে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুর পৌনে ১২টায় রেবেকাসহ তার পরিবারের ছয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওয়ানা হন, জানান প্রীতি।
আর/১১:০৪/২৮ জুন