সুরকার ও ব্যাণ্ড লিজেন্ড আশিকুজ্জামান টুলু নতুন এবং সম্ভাবনাময় শিল্পীদেরকে শ্রোতাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য 'রাগাসূত্র' নামে ইউ টিউবে একটি সাইট খুলেছেন। এটির সংগীত সংযোজনা ও পরিচালনা করেন আশিকুজ্জামান টুলু।
'রাগাসূত্র' এবার 'সাউণ্ড অফ সাইলেন্স' (নীরবতার ধ্বনি ) নামে একটি কনসার্টের আয়োজন করে। ২৮শে মে, ইটোবিকোর ডন বসকো কলেজিয়েট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই কনসার্ট ছিল বৃহত্তর টরন্টোর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বন্ধুদের অধিকাংশের মিলন মেলা।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অনুষ্ঠিত এই কনসার্টের শিল্পী ছিলেন টিনা কিবরিয়া, মর্তুজা সোয়েব, এবং স্বয়ং আশিকুজ্জামান টুলু ও অতিথি শিল্পী শাহজাহান কামাল। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন, তবলা ও পারকারশন- রনি পালমার, বেইজ গিটার- মোহাম্মদ বেলাল, রাজিব- তবলা ও ঢোল, আসিফ- রিদম গিটার, সৌরভ- ড্রাম, আশিকুজ্জামা টুলু- কিবোর্ড ও একুইস্টিক গিটার।
টরন্টোর পরিচিতমুখ উপস্থাপক দিলারা নাহার বাবু ও ইনামুল হক কিশলুর প্রাণবন্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে টিনা কিবরিয়া 'জীবনটা কিছু নয় একমুঠো ধুলো' গানটি দিয়ে 'সাউণ্ড অফ সাইলেন্স'-এর নীরবতা ভঙ্গ করে দর্শক শ্রোতাদের আনন্দে মুখর করে তুলেন। শুরু হয় একটার পর একটা প্রিয় গানের ডালির উৎসারণ। মর্তুজা সোয়েব গজল পরিবেশন করে ওকটি আলাদা মেজাজ আনেন। তাঁর কণ্ঠের সুক্ষ্মদর্শী কাজের মধুরিমাটাও লুকানো থাকে না। আশিকুজ্জামান টুলু আসর মাত করিয়ে দেন আমাদের ব্যাণ্ড খ্যাত গান দিয়ে। শাজাহান কামালের উদাত্তকণ্ঠে গাওয়া রবি বাবুর গান- 'তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম' সমস্থ অডিটোরিয়ামের শ্রোতাদর্শক পিনপতন নীবরতায় এই গান শ্রবণ করেন। মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শাজাহান কামালকে অতিথি শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে আশিকুজ্জামান টুলু সঙ্গীতের প্রতি তাঁর রক্তের টানকেই প্রমাণ করেছেন।
গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার লিখিত অনিল বাগচীর সুর করা 'আমি যে জলসাঘরে....' গানটি অনেকদিন পর কোনো আসরে শুনলাম। আলাউদ্দিন আলীর লেখা ও সুর করা মিতালী মুখার্জীর গাওয়া সেই বিখ্যাত গান- 'তোমার চন্দনা আজ মরে গেছে...' আমাদের স্মৃতির রেকর্ডে বেজে চলেছে অনুক্ষণ। চিত্রা সিংয়ের চিরকালীন গান - - 'আকাশ মেঘে ঢাকা শাওন ধারা ঝরে' কোনো আসরে আমি প্রথম শুনলাম। টিনা কিবরিয়াকে সাধুবাদ দিই এই গানটি অসাধারণ নিপুণতায় পরিবেশন করেছেন বলে। গানটির মধ্যে কিবোর্ডের যে সুক্ষ্ম এবং অনিবার্য সুন্দরের কাজ আছে তা টুলু অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাজিয়ে পূরণ করেছেন। এখানেই টুলুর অসাধারণত্বের উস্তাদি বৈশিষ্ট্য। বহুদিন বহুদিন এই গানের রেশ আমার কানের কাছে অনুরণন তুলবে।
মাধ্যাকর্ষণের চুম্বকীয় শক্তি ভেদ করে মহাশূন্যে উড়তে সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘন্টা। কিন্তু এই গন্তব্যের জয় আনতে হাজার মানুষের মেধাশ্রমের পাশাপাশি কারিগরি পরিশ্রম করতে হয় কয়েকযুগ। সাউণ্ড অফ সাইলেন্সের তিনঘণ্টার এই গানের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতেও 'রাগাসূত্রে'র সংশ্লিষ্ট সকল শিল্পীদের মাসের পর মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই তিনঘন্টায় তাঁরা সঙ্গীতপ্রিয় বন্ধুদের গানে গানে আনন্দ দিতে চেয়েছেন। তাঁদের এই আন্তরিক ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে। আশিকুজ্জামান টুলুর যে কোনো পরিবেশনা একটি অভিজ্ঞতা। তাঁর নেতৃত্বে 'রাগাসূত্রে'র গান পরিবেশনা আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতা।
ক্ষণিকের উন্মাদনার আনন্দ নয়, শিল্পী গান শুরু করার আগেই হাততালির কাঙালিপনাও নয়; বরং গানের সুধারসের অনুরণন যেন হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে দাগ কাটে এই ছিল আশিকুজ্জামান টুলুর উদ্দিষ্ট। সুর ও বাণীর কাছে একজন শিল্পীর এই আপন প্রার্থনার গোপন সৌরভটাই তিনি তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। প্রতিটা শিল্পীর জন্য গানের নির্বাচনই তার প্রমাণ। আমি আশিকুজ্জামান টুলু এবং তাঁর 'রাগসূত্রে'র সকল বন্ধুদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।