ঢাকা, ১৩ মে- হজ ট্রলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবরাহে স্বচ্ছতা আনতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশ মানেনি হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাসহ সংশোধিত আকারে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা করেনি সংগঠনটি।
হাব মহাসচিব শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে গেলে এ বছর আর ব্যাগ পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আমরা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশ পাইনি।
তবে হাব কার্যালয়ের সচিব মোঃ শহিদুল আলম বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের চিঠি হাবের পক্ষে রিসিভ করা হয়েছে। ওই চিঠির জবাবে আমরাও একটি চিঠি দিয়েছি মন্ত্রণালয়কে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে যা বলা হয়েছে তা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত্র শর্ত। হাব হচ্ছে সেবরকারি। তাই হাব তার বেসরকারি ক্রয় ব্যবস্থায়। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হজ ও ওমরা নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনকারিদের জন্য ট্রলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবরাহের দায়িত্ব হাবের। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রলিব্যাগের মান ও মূল্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির জন্যই তাই নির্দেশনা দেওয় হয়েছে হাবকে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অভিযোগমতে, ২০১৬ সালের বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনকারিদের জন্য ট্রলিব্যাগ সংগ্রহ ও সরবরাহের লক্ষে হাব গত ২০ এপ্রিল অপেক্ষাকৃত কম প্রচারিত দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় অনিয়ম করার সুযোগ রেখে।
বিজ্ঞপ্তিতে হজ ট্রলিব্যাগের কাপড়ের রং শুধু দু’টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। অন্যদিকে দরপত্র শিডিউল দাখিলের জন্য দ্বিতীয় কোনো জায়গা না রেখে একমাত্র জায়গা নির্ধারণ করা হয় হাব অফিস। এছাড়া দরপত্র দাখিলের জন্য কোনো শিডিউল প্রস্তুত কিংবা তা বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল মন্ত্রণালয় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার জন্য বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পুনঃপ্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয় হাবকে। পাশাপাশি শিডিউল প্রস্তুত ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং একাধিক স্থানে শিডিউল দাখিলের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এছাড়া ট্রলিব্যাগের রং নির্বাচনের জন্য শিডিউলে দুইয়ের অধিক রংয়ের উল্লেখ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে এ নির্দেশনার ১২ দিন পার হলেও নতুন করে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি হাব। উল্টো হাব মহাসচিব শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশ পাইনি।
অবশ্য হাব অফিসের সচিব মোঃ শহিদুল আলম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিগত সময়ে হাবের অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে সংগঠনটির প্রতি আস্থা রাখতে পারেনি সরকার।
মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল যে বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দেওয়া হয়, সে বিষয়ে হাব কিছুই জানায়নি মন্ত্রণালয়কে। তবে না জানালেও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল জলিল গত ২০ এপ্রিল বলেছিলেন, নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করবে সরকার। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হজযাত্রীদের ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করবে হাব। তবে ব্যাগ হতে হবে মানসম্পন্ন। যাতে দেশের এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়। স্বচ্ছতার প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মনিটরিং করবে হাবের বিভিন্ন কার্যক্রম। ট্রলিব্যাগ সংক্রান্ত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করতে হবে বহুল প্রচারিত দৈনিকে।
কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নানা অভিযোগ থাকলেও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কোনো রকম পাত্তাই দেয়নি হাব ।
হাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে হজ ট্রলিব্যাগ সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতি শুরু হয়। ২০১৪ সালে হাবের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। ওই বছর সরবরাহ করা ট্রলিব্যাগের হাতল খুলে গেলে সৌদি আরবে অসংখ্য হাজি ভোগান্তিতে পড়েন, বিক্ষোভ করেন। তা নিয়ে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ব্যাগ সরবরাহে অনিয়ম খুঁজে পায়। এ ঘটনায় সরকারের নীতি নির্ধারকরা ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে সময়ে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে হাজিদের ব্যাগ সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এফ/০৯:০৩/১৩মে