৭ টি বিশাল ভূখন্ডের সাথে সাথে টুকরো টুকরো অজস্র দ্বীপ রয়েছে পৃথিবীময়। সমুদ্রের সুগভীর নীল আর দ্বীপের ছিমছাম আবহাওয়া মিলে এরা যেন শান্তির আরেক নাম। জীবনের কোলাহলে ব্যস্ত বিপর্যস্ত মানুষ তাই বারবার শান্তির আশায়, অবসরকে নির্বিঘ্ন করতে ছুটে যায় কোন না কোন দ্বীপে। প্রতিটি দ্বীপই বিস্ময়ের ভান্ডার। মুগ্ধ করার যাবতীয় আনন্দ উপাদান যেন মজুদ এদের কাছে। বিশ্বজোড়া ভ্রমণকারীদের মতামত জরিপ করে দেখা গেছে, স্বর্গের অপ্সরি এই দ্বীপ গোষ্ঠির মাঝে সবচেয়ে রূপসী মাওই দ্বীপ। এটি যেন মুকুটের রত্ন। দ্বীপের অসাধারণ বীচ, হাইকিংসহ অসংখ্য বিচিত্র আয়োজন জীবনের রোমাঞ্চের স্বপ্নগুলোকে যেন সত্যি করে এক নিমিষে। কেন এত বিশেষ মাওই? আসুন জেনে নিই।
মাওই রেইনফরেস্ট
মাওই এর চমৎকার রেইন ফরেস্ট হল হানা। শান্তিময় অবসর কাটানোর জন্য এখানকার অধিবাসীদের প্রথম পছন্দ এই রেইনফরেস্ট। শান্ত নিবিড় এই বন কোথাও বেশ গভীর, বনের সবুজ আপনার মনকে প্রশান্ত করবে। কোথাও কোথাও বয়ে চলেছে ঝর্ণা। প্রিয়জনের সাথে সেই অপরূপ ঝর্ণার খনিজ জলের স্বাদ নিতে পারেন নির্বিঘ্নে। কোথাও কোথাও ফুলের সমারোহ, কোথাও বাঁশবন, কোথাও বনের প্রান্ত মিশেছে সমুদ্রের সাথে, কোথাও তৈরি হয়েছে পুকুর, সাঁতার কাটতে পারেন সেখানে অনায়াসে। কোথাও প্রকৃতি আপন খেয়ালে তৈরি করেছে গুহা, ঘুরে ঘুরে ভেদ করতে পারেন সেই রহস্য। আপনি যেমন মনের মানুষই হন না কেন হানা আপনাকে আপন করে নেবে। আপনি নিজেকে বনেরই এক অংশ বলে বোধ করবেন।
মাওই এর শুষ্ক দিক
দক্ষিণ এবং পশ্চিম মাওই এই দ্বীপের খুবই জনপ্রিয় এলাকা। দুইটি বিষয়ের জন্য এদের এই খ্যাতি। এক হল, উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়া আর চমকপ্রদ কয়েকটি বীচ। আপনি যদি সমূদ্রকে উপভোগ করতে চান তাহলে মাওই এর আয়োজনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে এমন আর কোন দ্বীপ নেই। এখানে আপনি দিনব্যাপী বিশ্রাম নিয়ে কাটাতে পারেন, সূর্যাস্তের সময় বীচে হেঁটে বেড়াতে পারেন, রাতে করতে পারেন বার্বি কিউ পার্টি। আবার রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে চাইলে সেটাও পারবেন। আছে সামুদ্রিক কচ্ছপের সাথে স্নোরকেলিং এর ব্যবস্থা, আছে বডি বোর্ডিং, কায়াক সেশন করতে পারেন সমূদ্রে। সাথে সাদা আর সোনালী বালুকাবেলার মনোমুগ্ধকর রূপ তো আছেই।
মাওই এর কোলাহল
মাওই তে উপভোগ করতে পারেন রাতগুলোও। ভাবার কোন কারণ নেই যে রাত কাটাতে হবে ঘুমিয়েই! এখানে কন্সার্টে যেতে পারেন মাওই আর্ট এবং কালচারাল সেন্টারে, মাওই ট্রপিকাল প্লান্টেশনের বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিতে পারেন। দেখতে যেতে পারেন মাওই বীচ হোটেলে আশির শতকের নাচের পার্টি। সবচেয়ে বিস্ময়কর আর আনন্দের লাগবে ছোট্ট বীচগুলোতে হওয়া ফায়ার স্পিনিং পার্টি। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে ফ্রাইডে টাউন পার্টি, স্থানীয়দের সাথে উপভোগ করতে পারেন শেফস টেবিল ইভেন্টগুলো!
সার্ফ সিন
ওহু'র দক্ষিণ উপত্যকায় বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সাথে সার্ফিং দেখার অভিজ্ঞতা অনন্য। শীতের সময় হনলুলু বে, হো'ওকিপা বীচ পার্ক এবং পে'আহি এই ধরণের সার্ফিং দেখার জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা। বিস্ময়ের সাথে উপভোগ করতে পারেন সার্ফিং, উইন্ড সার্ফিং, ঘুড়ি ওড়ানো, স্কিম বোর্ডিংসহ আরও অনেক কিছু। এখানকার উত্তাল ঢেউ এর সাথে খেলা করতে আসেন বিশ্বের সেরা সেরা সার্ফারগণ। নিরাপদ দূরত্ব দাঁড়িয়ে তাদের সার্ফিং দেখলেও আপনার হৃতস্পন্দন বন্ধ হয়ে আসতে চাইবে।
তিমি দর্শন
মাওই তে তিমি দেখার মৌসুমে যদি যান তাহলে এক বাক্যে দেখতে পাবেন যাদু! সময়টা হল বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এই সময় নারী হাম্পব্যাক তিমিরা আলাস্কান জলরাশি থেকে সাঁতরে হাওয়াই দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় চলে আসে বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্যে। তারা প্রায়ই এজন্য আউ'আউ চ্যানেলের অগভীর অঞ্চলকে বেছে নেয় এজন্য, এই চ্যানেলটি মাওই এবং পার্শ্ববর্তী দ্বীপ কাহো'অলাওয়ে এবং লানা'জে এর মাঝে অবস্থিত। তাই মাওই থেকে তিমির এই মৌসুমে আপনি অহরহই দেখতে পাবেন তিমিদের। তাদের সাঁতার কাঁটা, খেলা করা সবকিছুই ঘটবে আপনার চোখের সামনে।
ম্যাজিক মলকিনি
চন্দ্রাকৃতির ক্ষুদ্র দ্বীপটি প্রসিদ্ধ স্নোরকেলিং স্পট হিসেবে। জায়গাটি যেন যাদুকরি। যেমনি এর সৌন্দর্য্য অতুলনীয় তেমনি এখানে স্নোরকেলিং এর অভিজ্ঞতা অসাধারণ। সামুদ্রিক প্রাণীরা তাদের শান্ত পদচারণায় সমূদ্রের নীরবতা বজায় রাখে আর পাথুরে এলাকা তীব্র ঢেউ থেকে দেয় সুরক্ষা। জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন এই স্বর্গ থেকে।
হালিয়াকালায় সূর্যোদয়
আপনি হয়ত ভাবছেন সূর্যোদয় তো কতোই দেখলাম! দেখেছেন, কিন্তু এমন দেখেন নি কখনো এটি শতভাগ মানবেন আপনি একবার এখানে এলেই। হালিয়াকালা একটি শিল্ড ভল্কানো, যার নামের অর্থ 'সূর্যের বাড়ি' এমন অভূতপূর্ব সূর্যোদয়ের দৃশ্য তৈরি করে যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। হালিয়াকালা ন্যাশনাল পার্ক অনেক বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের আবাস। পার্কের সৌন্দর্য্য আপনাকে অভিভূত করতে বাধ্য।
রঙ্গীন বালু
হাওয়াই এর যে কোন বীচের কথা যদি আপনি চিন্তা করেন মাথায় প্রথমেই আসবে ঝকঝকে সাদা বালির কথা। কিন্তু মাওই আলাদা, অনন্য। এখানে বালির রঙে আছে নানান বৈচিত্র। কালো এবং লাল বালির মাঝে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে পারবেন আপনি। ওয়াইনাপানাপার কালো বালির বীচের চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়বে হানা হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়। প্রকৃতির খেয়ালে সোনালী বালুর সাথেও দেখা হবে আপনার মাওইতে।
আর/১০:৪৪/২৪ এপ্রিল