রাঙামাটি, ১৬ এপ্রিল- দুই সারিতে পানিভর্তি চারটি মাঝারি আকারের নৌকা। নৌকাগুলোর এক পাশে তরুণ অন্য পাশে তরুণীরা মগ হাতে দাঁড়িয়ে। অতিথিরা এসে পানি ছিটানোর সঙ্গে সঙ্গে তরুণ-তরুণীরা পরস্পরের দিকে পানি ছুড়ে মেতে ওঠেন জল উৎসবে। সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে কাপ্তাই উপজেলার চিংম্রং এলাকায় আসা সব সম্প্রদায়ের সব বয়সী মানুষের মধ্যে। গতকাল শুক্রবার মারমা সম্প্রদায়ের জল উৎসবে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বর্ষবিদায় ও বরণে মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা (মাসাস) কেন্দ্রীয়ভাবে এ উৎসবের আয়োজন করে। ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী চিংম্রং বৌদ্ধবিহার প্রাঙ্গণে আয়োজিত জল উৎসবে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মারমাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ২০ হাজারের বেশি মানুষ যোগ দেয় বলে আয়োজকেরা দাবি করেন।
জল উৎসব উদ্বোধনের আগে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা। মাসাস সভাপতি অংসু চাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রক্ত দিয়ে পাওয়া স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ঐক্য। সেই ঐক্য মারমা সম্প্রদায়ের জল উৎসবে দেখা যায়। এ উৎসব এখন দেশের অন্যতম জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, সংস্কৃতি বিকশিত হয় চর্চার মাধ্যমে। যে সম্প্রদায় নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসে, চর্চা করে সেই সংস্কৃতি টিকে থাকে। মারমা সম্প্রদায়ের জল উৎসব বাঙালিসহ সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঐক্যের প্রকাশ।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, সংস্কৃতিকে লালন করে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি সংরক্ষণে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার মো. সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর ও অংসুই প্রু চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন জল উৎসব উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব থোয়াই চিং মারমা।
চিংম্রং এলাকার বাসিন্দা উন্নয়নকর্মী কংচাই মারমা জানান, মারমা সম্প্রদায় বছরের শেষ দিনে বুদ্ধমূর্তিগুলোকে স্নান করান। পরে সেই পানির সংস্পর্শে এসে সব পানি পবিত্র হয়ে ওঠে। নতুন বছরে সেই পবিত্র পানি পরস্পরের দিকে ছিটিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে।
এস/১৮:২৫/১৬ এপ্রিল