ঢাকা, ১১ এপ্রিল- অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন ভয়াবহ সেই দিনটির কথা। ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল আশুলিয়ার বাইপাইল সংলগ্ন এলাকায় বহুল আলোচিত স্পেকট্রামের (শাহারিয়ার গার্মেন্টস) নয় তলা ভবন ধসে পড়ে। ভবনটি ধসে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৮০ জন শ্রমিক। ঘটনার দীর্ঘ ১১ বছর পর আজও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি ক্ষতিপূরণ। এমনকি আহতদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসাও নিশ্চিত করা হয়নি। যে মালিক ডোবা ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিলেন তারও কোনো বিচার হয়নি।
তবে সরকারি হিসেবে স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ধসের ঘটনায় ৬৩ জন শ্রমিক মারা যান। এছাড়াও নিখোঁজ ছিলেন অনেক।
সেই ভবন আর নেই। তবে সেখানে গড়ে উঠছে নতুন ভবন। একই মালিক আবারও পুরোদমে ভবন নির্মাণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন ভয়াবহ সেই ১১ এপ্রিলের কথা। ভবনের নিচে চাপা পড়া শ্রমিকদের সেই আর্তনাদ এখন আর কারও মনে নেই। তবে সন্তানহারা বাবা এখনও ভুলতে পারেননি সেই দুঃসহ স্মৃতি। যখন ভবনের নিচে চাপা পড়া নিখোঁজ ছেলে মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘বাবা আমাকে বাঁচাও আমি দেয়ালের নিচে আছি।’
তবে দেশে যখন তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিয়ে অনেকে সোচ্চার, তখন স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ধসের ঘটনা অনেকেই ভুলতে বসেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন সাভার ও ধামরাইয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘যেহেতু স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ধসে পড়ার ঘটনা জনমনের আড়ালে চলে গেল এবং বিচারের বিষয়টা ৬-৭ সাত মাসের মধ্যে ধামাচাপা দেয়া হলো। ফলে হুবহু রানা প্লাজায় একই ঘটনা হলো।’
তিনি আরও জানান, মালিকের অবহেলায় প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যে ২০০৫ সালের ২৪ মে মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ হোসেন ও পরিচালক আবুল হাসেম ফকিরকে জামিন দেয়া হয়। অভিযুক্তদের পর বিচারিক আদালত থেকে মুক্তি দেয়া হয় এই বলে যে, মামলাটি কোনো আহত শ্রমিক বা ভুক্তভোগী পরিবার না করে পুলিশ করেছিল। এরপর আর শুনানির জন্য তালিকাতেও আসেনি মামলাটি।
মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘আমরা মনে করি এ ঘটনা কোনো বিচার হবে না। ১১ বছর হয়ে গেল আর কীভাবে আশা করি।’
এদিকে, পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলছেন, ঘটনার পর দ্রুত বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তি দেয়া গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। তবে সেটি না হলে ভবিষ্যতে কারখানাগুলোতে আরও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
আর/১১:১৫/১১ এপ্রিল