ঢাকা, ০৭ এপ্রিল- চীন আগ্রহ দেখানোয় চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্পে এডিবি বাদ পড়তে যাচ্ছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো এক চিঠিতে চীন সরকারের অর্থায়নের প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য দলিলপত্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
চিঠিতে মুহিত লিখেছেন, “দোহাজারি-কক্সবাজার-রামু রেললাইন সম্বন্ধে চীন সরকারের আগ্রহ খুবই আশাবাদী। এক্ষেত্রে তারা সুদের হার ১ শতাংশে অবনমিত করেছে।
“তারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করাতে বিলম্বায়নের কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য সারাংশ এখনই পেশ করা দরকার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য অপেক্ষা করার অবকাশ আর নেই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বলেন, “এ মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না। সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে তা জানানো হবে।”
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জটিলতায় বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে এই রেলপথ নির্মাণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) উপেক্ষা করতে যাচ্ছে সরকার।
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের আওতায় প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছিল এডিবি।
এডিবির সম্মতির ভিত্তিতে ২০১০ সালে একনেক সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরপর নানা সময়ে এডিবিকে ঋণচুক্তির তাগাদা সরকার দিলেও বিভিন্ন রকম শর্ত দিয়ে তাতে দেরি করছে সংস্থাটি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এডিবি ইআরডির সঙ্গে এক বৈঠকে ২ শতাংশ সুদে ১৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়। তবে প্রকল্প এলাকায় হাতি চলাচলের উপযুক্ত করে রেললাইন নির্মাণের শর্ত দেয়।
এডিবির শর্তের কথা জানিয়ে ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, “তারা বলেছে, এই রেলপথ মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়ালগেজের হতে হবে। যেসব পাহাড়ি এলাকায় হাতি চলাচল করে, সেখানে আন্ডারপাস করে নির্বিঘ্নে হাতি চলাচলের সুযোগ রাখতে হবে।”
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়ার ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার পথ ট্রেনে যাওয়া যাবে।
একনেক সভায় অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী, এ প্রকল্পের অধীনে ১২৮ কিলোমিটার সিঙ্গেল ট্র্যাক ও মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণ হবে।
এডিবির শর্তে সেই নকশা পরিবর্তন করে মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েলগেজ করার জন্য সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সরকার।
২০১০ সালে অনুমোদনের সময় মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক হয়েছিল।
এডিবির শর্ত মেনে প্রকল্পে সংশোধন এনে ১৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতেও রাজি হয়েছিল সরকার। এখন নতুন সিদ্ধান্ত নিলে প্রকল্পটি আবারও নতুন করে নকশা তৈরী করতে হতে পারে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের আওতায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের আওতায় ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম হয়ে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এ রেলপথ।