ঢাকা, ০২ এপ্রিল- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রত্যেক শিশুকে শিগগিরই ‘প্রিভিলেজ কার্ড’ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেবা-সহযোগিতায় বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে এমন কার্ডের অধিকারীরা। শনিবার (০২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৬’ এর অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
শিশু একাডেমীর এ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফরেন্টলি অ্যাবল (পিএফডিএ)- ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমীর পরিচালক মোশাররফ হোসেন ও সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বক্তব্য দেন সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, পিএফডিএ’র প্রেসিডেন্ট সাজিদা রহমান ড্যানি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, শিগগিরই এমন শিশুর পরিবারকে একটি বিশেষ কার্ড দেওয়া হবে। যাতে সেই শিশু ও তার মা-বাবা বিশেষ অগ্রাধিকার পায়। চিকিৎসা, কেনাকাটা, শিক্ষা, গাড়ি পার্কিংসহ সবক্ষেত্রে তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জাতিসংঘে কী-নোট উপস্থাপন করেছেন। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। ‘যেকোনো শিশুর জন্ম খুব আনন্দের। কিন্তু অস্বাভাবিক হলে মাকে অনেক দোষারোপ করা হতো। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কৃতিত্বের দাবিদার’- বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকেই এমন শিশুদের বাইরে আনতে চান না। এটি ঠিক নয়। তাদের স্বাভাবিক স্নেহ-মমতা ও যত্ন পাওয়ার অধিকার রাখে। অটিস্টিক শিশু যতোটা ভালোবাসা পায়, ঠিক ততোটাই ফিরিয়ে দেয়।
অটিস্টিকদের সঠিক পরিসংখ্যান চান অধ্যাপক জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, আমেরিকায় ৬৮ জনের মধ্যে একজন অটিস্টিক। অটিজম কেন এভাবে বাড়ছে- কারণটি বের করতে হবে। এতে জেনেটিক পার্ট যেমন আছে, তেমনি পরিবেশগত কারণও আছে। সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
জাফর ইকবাল বলেন, যারা মনে করেন, অটিস্টিক বাচ্চারা কোনো কাজ পারবে না, তাদের ধারণা ভুল। তাদের যত্ন নিলে, বিশেষ সুবিধা দিলে তারাও অনেক কিছু করতে পারে। ‘তবে আমাদের দেশে কতোজন এমন আছে, সে পরিসংখ্যানটি বের করতে হবে। সঠিকভাবে এ সংখ্যাটি জানতে হবে। তারপর তাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যত্ন করতে হবে’- বলেন জাফর ইকবাল।
এ অধ্যাপক বলেন, একটি সঠিক পরিসংখ্যান, অনুদান, স্কুলের ব্যয় বহন করা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই যেন শিক্ষা নিতে পারে তারা। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকার বাইরেও এমন স্কুল অনেক হারে বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, অটিস্টিক মানুষদের একটি আলাদা ও বিস্তৃত জগৎ রয়েছে। সেটি আমাদেরও জানার বাইরে। তারা বিচিত্র গুণাবলী সম্পন্ন। তাদের ভেতরে অত্যন্ত সৃষ্টিশীল একটি জগৎ রয়েছে। তাদের সে জগৎটিকে আমরা প্রকাশ্যে সুযোগ করে দিতে পারি।
অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে একটি নাটক লিখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সেলিনা হোসেন বলেন, প্রতিটি শিশুরই যত্নের প্রয়োজন। এ শিশুদের আরও একটু বেশি যত্ন প্রয়োজন। তারাও অনেক কিছু করতে পারে। রাষ্ট্র ও সমাজ এবং পরিবার সহযোগিতা করলে এমন শিশুরা দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে।
নাছিমা বেগম বলেন, ২০০৮ সালে এ দিবসটি ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকে আমরা এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করি। আমরা বিশ্বে একটি উদাহরণ। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রতি বছর এ দিবসের উদ্বোধন করেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অবদান এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। তিনি জাতিসংঘে কী-নোট উপস্থাপন করছেন।
তিনি বলেন, অটিজমকে এক সময় পাপ বা অভিশাপ ভাবা হতো। কিন্তু এখন প্রমাণ হয়েছে, এটি পরিবেশগত ও অন্য কারণে হয়। প্রতিটি শিশু আলাদা চরিত্রের। আমরা অটিজম সম্পর্কে খুব কম জানি। সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করলে কষ্ট হবে না।
সাজিদা রহমান ড্যানি বলেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিস্টিক শিশুদের জন্য যা করছেন, তার অবদান সব সময় মনে থাকবে। এর আগে আমরা নিজেরা কষ্ট পেয়েছি। অনেকেই অটিস্টিক শিশু নিয়ে লজ্জায় থাকতেন। কিন্তু সে মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। আমার শিশু অটিস্টিক বলে আমি লজ্জিত নই, বরং গর্বিত। কারণ, আমার শিশু এমন অনেক কিছু করতে পারে, যা প্রশংসার যোগ্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনায় নৃত্য ও গীতে মুগ্ধ হন উপস্থিত সবাই। তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য ও চিত্রকর্মও বিস্মিত করে সবাইকে। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনাও করেন রেজাউল করিম সিয়াম নামের একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। তার সাবলীল উপস্থাপনায় মুগ্ধ হন সবাই। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের কার্যক্রম নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও উপস্থাপিত হয়।
এফ/২২:৪০/০২ এপ্রিল