সিলেট, ১৮ মার্চ- ১৯৪৮ সালে নগরীর চৌহাট্টায় (বর্তমান শহীদ সামসুদ্দীন হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট মেডিকেল স্কুল। কালের পরিক্রমায় সেই স্কুল পরিণত হয় মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু থেমে থাকা নয়, সেই কলেজ এখন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পথে।
জানা যায়, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্কুলটিকে কলেজে রূপান্তরের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এই দাবিতে ডা. দেওয়ান নূরুল হোসেন চঞ্চল ও দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ সিলেটের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে স্কুলটিকে কলেজে উন্নীত করা হয়। ১৯৬৮-৬৯ সালে কলেজ ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭১-৭২ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজের কিছু কার্যক্রম বর্তমান ক্যাম্পাসে (কাজলশাহ) স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালে কাজলশাহ ক্যাম্পাসে পুরো কলেজ ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৬ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ।
কলেজ সূত্র জানায়- ১৯৯৮ সালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (স্নাতকোত্তর) চালু করা হয়। ৪টি ডিপ্লোমা কোর্স দিয়ে শুরু হয়েছিল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন। বর্তমানে কলেজটিতে ২৬টি কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া কলেজটি থেকে শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা, এমএস, এমডি ও এমফিল করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে কলেজটিতে ডেন্টাল ইউনিট চালু হয়েছে। প্রতি বছর ডেন্টাল বিভাগে ৫২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
সময়ের যতো গড়িয়েছে, ততোই ১৯৬২ সালে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এমবিবিএস কোর্সের যাত্রা শুরু করা সিলেট মেডিক্যাল কলেজে যুক্ত হয়েছে সাফল্যের অনেক পালক। বাংলাদেশের প্রথম সরকারি আট কলেজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ। বাংলাদেশ তো বটেই, নেপাল, কাশ্মির, ফিলিস্তিন, ইরান, ইরাক, মালয়েশিয়া, ভুটানের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছেন। বর্তমানে এমবিবিএস কোর্সে প্রতিবছর ১৯৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন এ মেডিক্যালে। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস ছাড়াও স্নাতকোত্তর পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শুধু সিলেটেরই নয়, দেশের অন্যতম ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এবং সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখেও এটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। গত ২১ জানুয়ারি সিলেট সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন আলিয়া মাদরাসা মাঠে জনসভায় তিনি ওসমানীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার আশ্বাস দিয়ে যান। তাঁর সেই আশ্বাস পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনায় উজ্জ্বল।
জানা গেছে, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় উন্নীত করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব সহকারেই দেখছেন। গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জনগণের দোড়গোড়ায় উন্নত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য সিলেটে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। জনসংখ্যার বিবেচনায় প্রতি জেলায় একটি করে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি আমাদের চিন্তায় রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্টরা আরো বেশি আশা খুঁজে পাচ্ছেন। এছাড়া অর্থমন্ত্রীর তৎপরতাও সবাইকে খুশির বারতা দিয়ে যাচ্ছে। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে জমি বরাদ্দের জন্য অর্থমন্ত্রী সিলেটের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন। সবমিলিয়ে খুব শিগগিরই যে ওসমানী’র সাথে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তকমা লাগতে যাচ্ছে, এ বিষয়টি এখন প্রায় নিশ্চিত।
এফ/০৯:৫২/১৮মার্চ