চট্টগ্রাম, ২৮ ফেব্রুয়ারী- এক বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে খোলা আকাশের নিচে কনটেইনারের ভেতরে পড়ে আছে একটি তেজস্ক্রিয় বস্তু। নিয়ম অনুযায়ী এই বস্তুটি ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটে সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু স্থানান্তর খরচ কে বহন করবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় বস্তুটি এখনো সরানো যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বন্দরে যেভাবে তেজস্ক্রিয় বস্তুটি রাখা হয়েছে, তা মোটেও নিরাপদ নয়। দ্রুত এটি বন্দর থেকে সরিয়ে নিরাপদে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
গত বছরের ১৬ জানুয়ারি বন্দর চত্বরে একটি কনটেইনারে থাকা পুরোনো ইস্পাতের পণ্য থেকে তেজস্ক্রিয় বস্তুটি উদ্ধার করেন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ২৩ বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বন্দরে স্থাপিত একটি প্রকল্পের আওতায় এটি উদ্ধার করা হয়। তেজস্ক্রিয় বস্তুটি একটি ধাতব পাত্রে সংরক্ষণ করে খালি কনটেইনারে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। কনটেইনারটি এখন বন্দরের সিপিআর ফটকের পাশে খোলা জায়গায় পড়ে আছে।
তেজস্ক্রিয় বস্তুটি উদ্ধারের সময় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পরিচালক বিজ্ঞানী মাসুদ কামাল। বন্দরে এভাবে তেজস্ক্রিয় বস্তু পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, তেজস্ক্রিয় বস্তু বন্দর চত্বরে কনটেইনারে পড়ে থাকা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। কারণ, এটি চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হবে। মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। যত দ্রুত সরিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে ততই মঙ্গল।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের একটি কোম্পানি পুরোনো ইস্পাত পণ্যের এই কনটেইনারটি ভারতে রপ্তানি করে। তবে ভারতে নেওয়ার পথে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়। পরে এটি চট্টগ্রামে ফেরত পাঠানো হয়।
বন্দর সূত্র জানায়, তেজস্ক্রিয় বস্তুটি সরিয়ে নিতে ২২ লাখ ১৬ হাজার ২০০ টাকা খরচ নির্ধারণ করে পরমাণু শক্তি কমিশন। বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় কমিশন।
বন্দর সূত্র জানায়, চিঠি পাওয়ার পর খরচের টাকা কে দেবে, তা নিয়ে একাধিকবার কমিশনের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। যে প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি পণ্যে তেজস্ক্রিয় বস্তুটি শনাক্ত হয়েছে, সেই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকেও ব্যয় মেটাতে বলে পরমাণু শক্তি কমিশন।
জানতে চাইলে পুরোনো ইস্পাত পণ্যের রপ্তানিকারক দিদারুল আলম বলেন, ‘পরমাণু শক্তি কমিশন বস্তুটি স্থানান্তর বাবদ ২২ লাখ টাকার যে খরচ দিয়েছে, সেটি অযৌক্তিক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা (উদ্ধারকাজে যুক্ত ছিলেন) আমাদের বলেছেন, একটি ধাতব বাক্স তৈরি করে গাড়ি দিয়ে তেজস্ক্রিয় বস্তুটি ঢাকায় নেওয়ার সুযোগ আছে। এ হিসাবে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, ‘তেজস্ক্রিয় বস্তু উদ্ধারে আনুষঙ্গিক সহায়তা দিয়েছে বন্দর। এখন এটি সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পরমাণু শক্তি কমিশনের। আমরা সেটি জানিয়ে দিয়েছি। সরিয়ে নেওয়ার খরচ বহন করা বন্দরের সেবার আওতায় পড়ে না।’
উদ্ধার হওয়া তেজস্ক্রিয় পদার্থটির নাম রেডিয়াম বেরিলিয়াম। শিল্প-কারখানার মান নিয়ন্ত্রণের কাজে এর ব্যবহার হয় বলে তখন বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই বস্তুর তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ঘণ্টায় ১২ হাজার মাইক্রোসিয়েভার্টস (তেজস্ক্রিয়তার একক)। এটি সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নঈম চৌধুরী গতকাল শনিবার মুঠোফোনে বলেন, তেজস্ক্রিয় বস্তুটি যেহেতু বন্দরে শনাক্ত হয়েছে, সে জন্য এটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য বন্দরকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি যত দ্রুত নিরাপদে সাভারের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটে স্থানান্তর করা যায় ততই মঙ্গল।