ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি- একাত্তরে গণহত্যা, নির্যাতন, গণধর্ষণের দায়ে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী রাজাকার, আল বদর নেতাদের কাঠগড়ায় তোলার পর্ব অনেকটা এগিয়েছে। তার পরে এ বার আরও এক ধাপ এগোতে চাইছে ঢাকা। একই অভিযোগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন যে সব পাক সেনার নামে মামলা হয়েছিল, এ বার তাদের বিচার করতে চায় শেখ হাসিনার সরকার।
বাংলাদেশের নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সম্প্রতি কলকাতায় আনন্দবাজারকে জানান, এ দাবি নতুন নয়। একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই রাজাকারদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল খুন, ধর্ষণ, বর্বরতায় সরাসরি দায়ী পাক সেনাদেরও বিচার হোক। নৌমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা বাংলাদেশের মানুষের জনপ্রিয় দাবি। শেখ হাসিনার সরকার রাজাকারদের বিচারের কাজটি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। চার জন রাজাকার শিরোমণির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। ২০০ জন পাকিস্তানি সেনার বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকারও মনে করে এটা তাদের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা।’’
মন্ত্রী জানান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব ক’টি সংগঠনই এই দাবিতে একমত। বড় বড় সভা-সমাবেশ হচ্ছে ঢাকায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনে দোষী পাক সেনাদের বিচার চেয়ে সংসদে প্রস্তাব আনার দাবিতে বৃহস্পতিবারই স্পিকার শরমিন শিরিন খানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দেলন’। ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলে সমাজের বিশিষ্ট মানুষদের সঙ্গে নৌমন্ত্রীও ছিলেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক আবেদ খান জানান, একাত্তরে ভারতীয় সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণের পরই ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। কিন্তু দেশের আদালতে সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৭৪ সালে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় পাকিস্তান সরকার। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি তারা পালন করেনি। নৌমন্ত্রী জানান, সেই ১৯৫ জনের পাশাপাশি খুন-ধর্ষণে অভিযুক্ত আরও বেশ কয়েক জন পাক সেনার নামও পাওয়া গিয়েছে, যাদের সকলের বিচারের দাবি জানানো হচ্ছে এ বার।
পাকিস্তান তাদের সেনাদের বিচারের জন্য তুলে দিতে চাইবে না জেনেও কেন এই আন্দোলন?
নৌমন্ত্রী বলেন, আসল উদ্দেশ্য পাকিস্তানের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো। রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য এক দিকে তারা যেমন জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে, সংসদে নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছে, পাশাপাশি রাখঢাক না-করে ঢাকার পাক দূতাবাস সরাসরি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করেছে। জঙ্গি ও জাল নোটের কারবারিদের সংগঠিত করার কাজেও নেমেছে ঢাকার পাক হাই কমিশন। ঢাকা নির্দিষ্ট প্রমাণ দেওয়ার পরে তাদের দুই কর্মকর্তাকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে। মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘‘ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার পর পাক সেনাদের ঢাকায় আনতে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে ইসলামাবাদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তার পরেও পাকিস্তান তাদের সেনাদের ঢাকায় না-পাঠালে ইসলামাবাদকে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়তে হবে।’’
আবেদ খান জানান, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন পাক সেনাদের বিচারের দাবিতে একজোট হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট মানুষেরাও এই দাবিতে সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তাঁরা সকলে মিলেই ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দেলন’ নামে এই সাধারণ মঞ্চ গড়ে তুলেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘‘শাহবাগের জনজোয়ারে গুটিয়ে যেতে হয়েছে জামাতে ইসলামিকে। নতুন প্রজন্মের সেই আন্দোলনের জয়যাত্রাতেই আজ বিচার হচ্ছে, ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হচ্ছে রাজাকারদের। দোষী পাক সেনাদের বিচার চায় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারাও।’’