হারানো ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করেছেন ইমদাদুল হক মিলন। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের গত আসরে অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার হতাশা কাটিয়ে উঠতে উন্মুখ শেখ সজীব। তামিমুল ইসলামকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্য। এই তিনে ভর করে ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ের আসরে আর্চারি থেকে সোনার পদক পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
গত বছর জানুয়ারি থেকে টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের আবাসিক ক্যাম্পে তির-ধনুক নিয়ে অনুশীলন চলছে। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে মোট ১৬ জন আর্চার প্রস্তুত হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ হাগ ইয়ং কিমের অধীনে।
আট জনের দুটি দল (প্রতি দলে চার জন করে ছেলে ও মেয়ে) রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড বিভাগে অংশ নেবে। দুই বিভাগ মিলিয়ে এবার ১০টি সোনার পদকের লড়াইয়ে নামবেন আর্চাররা।
লম্বা সময়ের প্রস্তুতি আর সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্য আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে মিলন, তামিম, মাথুই প্রু মারমাদের। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিরন্দাজরাও জানালেন, গুয়াহাটি-শিলংয়ের আসরে সোনার হাসি হাসতে চান তারা।
২০০৬ সালের শ্রীলঙ্কার আসরে প্রথমবারের মতো তিরন্দাজরা নামেন পদকের লড়াইয়ে। সেবার ছেলেদের ৭০ মিটার অলিম্পিক রাউন্ডের ব্যক্তিগত ইভেন্টে (রিকার্ভ) প্রথম ব্রোঞ্জ জেতেন বাংলাদেশের নূরে আলম। একই ইভেন্ট থেকে দলগত ব্রোঞ্জও জিতেছিল বাংলাদেশ।
২০১০ সালে নিজের দেশের আসরে ছেলেদের রিকার্ভে ব্যক্তিগত ইভেন্টে রূপার হাসি সজীবের; এই ইভেন্টের দলগত রূপাও জেতে বাংলাদেশ। এরপর মেয়েদের ৭০ মিটার অলিম্পিক রাউন্ডে (রিকার্ভ) মাথুই প্রুপ মারমা ব্যক্তিগত ও বাংলাদেশ দলগত ব্রোঞ্জ জিতেছিল। মাথুই প্রু মারমা এবারও আছেন; তার সঙ্গে আছেন বিউটি রায়, শ্যামলী রায়, সুস্মিতা বনিক, রোকসানা আক্তার, তামান্না পারভীনরা।
২০০৬ সালে ব্রোঞ্জ, ২০১০ সালে রূপা; এবার সোনার পদকটা ধরার লক্ষ্য। গত বছর সেপ্টেম্বরে সামোয়ায় যুব কমনওয়েলথ গেমসের রিকার্ভ বোতে সোনা জেতা তামিমুল ওত সব হিসেবে মধ্যে নেই। প্রত্যাশার চাপ ভুলে, শুধু স্নায়ুর লাগামটা মুঠোয় রেখে নিশানাভেদের স্বপ্ন তার চোখে।
“এখানে যেভাবে প্রস্তুতি চলছে; আমরা যেভাবে পারফরম করছি, এভাবে চললেই ভালো ফল হবে। সোনার পদকের জন্যই খেলব। তবে সাফল্য নির্ভর করবে, নিজেকে যে যত শান্ত রাখতে পারবে, তার ওপর।”
“এটা আমার প্রথম এসএ গেমস। ব্যক্তিগত, দলীয় ও মিক্সড-তিন ইভেন্টেই অংশ নেব। তিনটাতেই গোল্ড পাওয়ার ইচ্ছা আমার। কোচ আমাকে বলেছেন, আগে যা করেছ সব ভুলে যাও। সব ভুলে গিয়ে শূন্য থেকে শুরু করো। আমিও সেভাবেই ভাবছি”, যোগ করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) এই তিরন্দাজ।
দেশের হয়ে প্রথম রূপা জেতা সজীব এবার গত আসরের হতাশা ভুলতে চান। দেশকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার তাড়নার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “লক্ষ্য তো একটাই-গোল্ড; গতবার মিস করছি। ওটা ছিল প্রথম আমার বড় কোনো টুর্নামেন্ট। এবার তো অনেক দিন খেলছি; অভিজ্ঞতাও হয়েছে। গতবারের ভুলটা যেন এবার না হয়, সেদিকেই লক্ষ্য আমার।”
হারানো ছন্দ একটু একটু করে ফিরে পাওয়ায় স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে পারছেন মিলন। ২০১৩ সালের ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে সর্বশেষ রূপা জেতা এই তিরন্দাজ ভারত থেকে খালি হাতে ফিরতে চান না।
“এটা আমার দ্বিতীয় এসএ গেমস। প্রথমবার ভালো করতে পারিনি; এ নিয়ে একটু হতাশা আছে। মাঝে পারফরম্যান্সের অবস্থাও ভালো ছিল না। এখন আবার ভালো করছি। এটা ধরে রাখতে পারলে পদক জেতা সম্ভব।”
“আন্তর্জাতিক-দলগত ব্যক্তিগত মিলিয়ে ১২টা পদক পেয়েছি আমি। সর্বশেষটা পেয়েছি ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে। এ মুহূর্তে যেহেতু ফর্মে আছি, আমিও চাই নিজেকে আগের পর্যায়ে তুলে ধরতে,” যোগ করেন মিলন।