কলকাতা, ১৭ জুলাই- কলকাতার বুকে মাথা তুলেছে আর একটা হাওড়া ব্রিজ! আগামী বছরের মধ্যে আর একটা বিদ্যাসাগর সেতুও নাকি গজিয়ে উঠবে! কী আশ্চর্য! ভাবছেন, আস্ত দু’টো ব্রিজ থাকতে নতুন ব্রিজের দরকার কী? আর তা তৈরি হলই বা কবে?
ঘাবড়াবেন না। এ হাওড়া ব্রিজ আসল নয়। নকল। যাকে বলে রেপ্লিকা। আর তার সঙ্গে গঙ্গা পারাপারেরও কোনও যোগ নেই। এর ঠিকানা দক্ষিণ কলকাতায়, বাইপাসের ধারে। পাটুলি মোড়ের কাছে গেলেই দর্শন মিলবে। ঝিলের উপর বসানো রয়েছে অবিকল হাওড়া ব্রিজ। তার গায়ের আলোর ছটা রাতের বেলা আপনাকে স্থান বিভ্রান্তিতেও ফেলতে পারে। আর পাশের ঝিলেই আগামী বছরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে দ্বিতীয় বিদ্যাসাগর সেতুও। পরিকল্পনা সারা। দুর্গাপুজো মিটলেই কাজ শুরু হবে।
মানে, কলকাতার মধ্যেই মিনি কলকাতা। যা দেখে আম নাগরিকও যারপরনাই আহ্লাদিত। আপাতত পাটুলির বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে সেতু-বৃত্তান্ত। শুধু কলকাতার মুখ এই দু’টি সেতুই নয়। বাঙালির ফুটবলের আবেগ মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, বিশ্ব বাংলার বিরাট গ্লোব, বয়স্কদের জন্য গ্রিন জোন-সবই হাজির পাটুলির ঝিলপাড়ে। শহরবাসীর বেড়ানোর নতুন ডেস্টিনেশন। নবপ্রজন্মের কাছে সেলফি হাঁকানোর খাসা জায়গা।
পাটুলি ঝিলের উপর ‘হাওড়া ব্রিজ’ বসানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। ১৫৫ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া শিল্পকর্মটির পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে সাড়ে ১২ টন লোহা। গত দুর্গাপুজোয় নাকতলা উদয়ন সংঘে যে লোহা ব্যবহার হয়েছিল, হাওড়া ব্রিজের এই রেপ্লিকা তা দিয়েই বানানো হয়েছে। এ দিকে পুজো আসছে। বাঙালির সেরা উৎসবের ছোঁয়া হাওড়া ব্রিজের গায়ে লাগবে না, তা কি হয়? প্রকল্পের উদ্যোক্তা ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ব্রিজের এক প্রান্তে থাকবে কাঁধে করে দুর্গাপ্রতিমাকে নিয়ে বিসর্জন দিতে যাওয়ার দৃশ্য। অন্য প্রান্তে, বিসর্জনের পর মঙ্গলঘট মাথায় করে ফেরার দৃশ্য।
কাউন্সিলর জানিয়েছেন, পরিবেশ ও পাখিদের কথা মাথায় রেখে ‘লো কার্বন’ এলইডি বাল্বে ব্রিজ সাজিয়ে তোলা হবে। ঝিলে জলের স্বাভাবিক প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখায় নজর দেওয়া হবে। একই বিষয়গুলি মাথায় রেখে পাটুলি ঝিলে দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতুর রেপ্লিকা বসানোর পরিকল্পনা চলছে। এই দুই সেতুর সঙ্গেই অভিসারে মাতবে এক ভাসমান রেস্তরাঁ। কলকাতায় এই প্রথমবার। পাটুলির তৃতীয় ঝিলে এই রেস্তরাঁর ইতিমধ্যে প্রকল্পের ডিটেলড প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা পড়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে। পরিবেশমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই খাতে এক কোটি টাকা বরাদ্দও করেছেন। পুজোর পর পুরদমে কাজ শুরু হবে।